পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার কাঁঠালিয়া খালের ওপর নির্মিত লোহার সেতুর পাটাতনের স্ল্যাবে মধ্যে রডের পরিবর্তে সুপারিগাছ ব্যবহার করা হয়েছে। সম্প্রতি সেতুটির কয়েকটি স্ল্যাব ভেঙে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন সুপারিগাছের চেড়া দেখতে পান।
এ-সংক্রান্ত ছবি ও ভিডিও ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে সেতুটি দিয়ে চলাচল করা গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, এক বছর আগে সেতুটির সংস্কারকাজ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌকির আহমেদ ওরফে সীমান্ত। তিনি স্ল্যাব তৈরিতে রডের পরিবর্তে সুপারিগাছ ব্যবহার করেছেন। অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৌকির আহমেদ।
আজ শনিবার দুপুরে পিরোজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমীনুল ইসলাম লোহার সেতুটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, সেতুর স্ল্যাব তৈরিতে অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের লোহার সেতুটির কয়েকটি স্থানে স্ল্যাব ভেঙে গেছে। ভেঙে যাওয়া স্ল্যাব সরিয়ে স্থানীয় লোকজন সেখানে কলাগাছ দিয়ে চলাচলের উপযোগী করেছেন। সেতুর মাঝখানে একটি স্ল্যাবের একাংশ ভাঙা রয়েছে। ভাঙা স্ল্যাবের মধ্য সুপারিগাছের অংশ দেখা গেছে। এ ছাড়া ভেঙে যাওয়ার পর সেতু থেকে সরিয়ে ফেলা চারটি স্ল্যাবের মধ্যেও সুপারিগাছের ফালি পাওয়া গেছে। এসব স্ল্যাবের মধ্যে কোনো রড পাওয়া যায়নি।
কাঁঠালিয়া গ্রামের রিকশাচালক লিয়াকত আলী বলেন, কয়েক দিন আগে সেতুর ভেঙে যাওয়া স্ল্যাবের মধ্যে তাঁরা সুপারিগাছ দেখতে পান। স্ল্যাবগুলোর মধ্যে কোনো রড নেই। রডের পরিবর্তে সুপারিগাছের চেরা (ফালি) দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি সেতু দিয়ে চলাচলের সুবিধার্থে ভেঙে যাওয়া স্ল্যাব সরিয়ে কলাগাছ দিয়েছেন। সেতুটিতে এখনো কয়েকটি স্ল্যাব ভাঙা রয়েছে। স্ল্যাবের মধ্যে রডের পরিবর্তে সুপারিগাছ দেওয়ার খবর জানাজানি হওয়ার পর মানুষ সেতুটি দিয়ে চলাচল করতে ভয় পাচ্ছেন।
কাঁঠালিয়া গ্রামের এনায়েত হোসেন খান বলেন, ‘আগে শুনেছি, রডের পরিবর্তে বাঁশ দিত। এবার নিজের চোখে দেখলাম, রডের পরিবর্তে সুপারিগাছ। এসব চোরের বিচার করা উচিত।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কাউখালী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় দুটি সেতু নির্মাণসহ ছয়টি সেতুর মেরামত কাজের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অর্থায়নে এলজিইডি ২০২১-২২ অর্থবছরে একটি দরপত্র আহ্বান করে। মেরামতকাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫০০ টাকা। ওই কাজের মধ্যে কাউখালী সদর ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া খালের লোহার সেতুটি ছিল। পিরোজপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হালিমা এন্টারপ্রাইজ কার্যাদেশ পায়।
মেসার্স হালিমা এন্টার প্রাইজের মালিক মো. লাভলু খান বলেন, ‘লটারির মাধ্যমে কাজ আমি পেয়েছিলাম। কাজ পাওয়ার পর কাউখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌকির আহমেদ সীমান্ত আমার কাছ থেকে কাজ কিনে নিয়ে যান। আমি প্রথমে কাজ বিক্রি করতে চাইনি। তিনি কাজগুলো করার জন্য পীড়াপীড়ি করায় আমি তাঁকে কাজ করতে দিই। তবে তাঁকে বলেছিলাম, আমি নতুন ঠিকাদার। কাজ ভালো করে করবেন, যেন আমার প্রতিষ্ঠানের বদনাম না হয়। কিন্তু তিনি এটা কী করলেন? তৌকির আহমেদের এমন কাজে আমি খুবই বিব্রত।’
উপজেলার গোসনতারা গ্রামের বাসিন্দা শেখ মো. খলিলুর রহমান বলেন, কাঁঠালিয়া, বিড়ালজুড়ি ও গোসনতারা গ্রামের মানুষ কাঁঠালিয়া খালের সেতুটি দিয়ে চলাচল করেন। এ সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল ও রিকশা চলাচল করে। এখন জরুরি ভিত্তিতে স্ল্যাবগুলো অপসারণ করা প্রয়োজন। সেতুটিতে নতুন করে স্ল্যাব দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে কাউখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌকির আহমেদ বলেন, ‘মেসার্স হালিমা এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে কাজটি আমি কিনিনি। পল্লব সিকদার কিনেছেন। তবে কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। আমরা ৪৬টি নতুন স্ল্যাব তৈরি করেছি। আমাদের করা স্ল্যাবের মধ্যে রড দিয়েছি, সুপারিগাছ দেওয়া স্ল্যাব আগের।’
পল্লব সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। কাউখালী উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কাজটি আমার যোগদানের আগে করা হয়েছে। তবে আমি জেনেছি, ঠিকাদার লোহার সেতুটির ৭৪টি স্ল্যাবের মধ্যে ৪৬টি নতুন করে করেছেন। ঠিকাদার বলেছেন, তিনি সুপারিগাছ ব্যবহার করেননি। ওগুলো পুরোনো স্ল্যাব।’
কাউখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু সাঈদ মিঞা বলেন, রডের স্থানে সুপারিগাছ ব্যবহার লজ্জাজনক, যা দেশের মানুষের কাছে কাউখালীবাসীকে ছোট করেছে। যাঁরা সরকারের উন্নয়নকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন, তাঁদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।