হাতে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড, মাথায় বাংলাদেশের পতাকা, কেউ কেউ ফুঁ দিচ্ছেন শাঁখে, কেউ একটানা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। স্লোগানে উত্তাল প্রতিবাদ করছেন হাজারো মানুষ। আশপাশের সড়কে যান চলাচল সব বন্ধ। আজ রোববার বিকেলে খুলনা নগরের শিববাড়ী মোড় চত্বরের দৃশ্য এটি।
রোববার বেলা তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত দেশব্যাপী সংঘটিত মন্দির ও ঘরবাড়িতে হামলা এবং লুটপাটের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন খুলনায় বসবাসরত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। সচেতন সনাতনী ছাত্র ও নাগরিক সমাজের আহ্বানে ওই সমাবেশ ডাকা হলেও তা শেষ পর্যন্ত আর কোনো ব্যানারে ছিল না।
এ সময় ‘আমি কে তুমি কে বাঙালি বাঙালি’, ‘আমার দেশ, সবার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’; ‘আমার ঘরে হামলা কেন, জবাব চাই জবাব চাই’; ‘সনাতনীর ওপর আক্রমণ, মানি না মানব না’, ‘আমার মাটি আমার মা, বাংলাদেশ ছাড়ব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।
শিববাড়ী মোড় চত্বরকে কেন্দ্র করে পূর্বে জীবন বীমা ভবন, পশ্চিমে টিসিবি ভবন, দক্ষিণে হোটেল সিটি ইন মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল সমাগমটি। এতে কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ‘হর হর মহাদেব’, ‘জয় শ্রী রাম’স্লোগান ছিল নারী-পুরুষের মুখে মুখে। মা–বাবার হাত ধরে ছেলেমেয়ে, মায়ের কোলে শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ এতে উপস্থিত হন। এতে ‘মুগ্ধ ভাই পানি হবে, মন্দিরের আগুন নিভাতে হবে’, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’, ‘কথায় কথায় ভারত যা, দেশটা কারোর বাপের না’ নানা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
সমাবেশে আসা গল্লামারী এলাকার শিক্ষক প্রফুল্ল সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। এর প্রতিবাদে আমরা এখানে এসেছি। এই দেশ আমাদের মাতৃভমি। আমরা কোথাও যেতে চাই না, এ দেশের মঙ্গল চাই। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যে মূল সুর এর সঙ্গে আমি একমত। আমিও চাই এখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না।’
খুলনার ফুলতলা থেকে স্বজনদের নিয়ে আসা দিলীপ কুমার বলেন, ‘দেশে তো হিন্দুরা এখনো দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। বিভিন্ন সময়ে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হয়। আমরা আজ সবাই মিলে প্রতিবাদ করতে এসেছি। আমরা কোথাও যেতে চাই না। আমরা এখন দুষ্কৃতকারীদের প্রতিরোধ করব।’
খুলনা মহানগর পূজা উদ্যাপন কমিটির গণসংযোগবিষয়ক সম্পাদক ও শিববাড়ী কালীমন্দিরের সহসভাপতি বিমল সাহা বলেন, ‘আমাদের ওপর আর যেন কোনো হামলা না হয়, তার নিশ্চয়তা ও যেসব হামলা হয়েছে, তার বিচার চাই আমরা।’ ‘আমারও তো রক্ত লাল সইব আর কত কাল’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন নগরের দোলখোলা এলাকার রিনা সরকার। তিনি বলেন, ‘আজ হাজার হাজার মানুষ আমরা হিন্দু অত্যাচারের প্রতিবাদে সমবেত হয়েছি। আমরাও এ দেশের মানুষ। স্বাধীনতাযুদ্ধে আমাদেরও রক্ত ঝরেছে। আমরা অধিকার নিয়ে নির্ভয়ে বাঁচতে চাই।’
সমাবেশের কারণে বেলা তিনটা থেকে কেডিএ অ্যাভিনিউ হয়ে নগরের সোনাডাঙ্গা ও নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার পথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল চারটার দিকে যশোর রোডের যান চলাচল ঘণ্টাখানেক বন্ধ থাকে।