নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডে মিছিলে যোগ দিলে তিনটি রাবার বুলেট ও একটি মেটাল বুলেট জসীমের হাত, পিঠ ও কোমরে বিদ্ধ হয়। এখন অর্থাভাবে তিনি চিকিৎসা করাতে পারছেন না
নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডে মিছিলে যোগ দিলে তিনটি রাবার বুলেট ও একটি মেটাল বুলেট জসীমের হাত, পিঠ ও কোমরে বিদ্ধ হয়। এখন অর্থাভাবে তিনি চিকিৎসা করাতে পারছেন না

অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ জসীমের

নারায়ণগঞ্জের আদমজীতে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন মো. জসীম (২৮)। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আদমজীর কদমতলী এলাকায় থাকতেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ও পুলিশ-বিজিবি শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালালে প্রতিবাদে অন্য অনেকের মতো ১৯ জুলাই আন্দোলনে যোগ দেন জসীম।

নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডে মিছিলে যোগ দিলে তিনটি রাবার বুলেট ও একটি মেটাল বুলেট জসীমের হাত, পিঠ ও কোমরে বিদ্ধ হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে গ্রেপ্তারের ভয়ে তিনি পটুয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে চলে যান। এখন কর্মহীন জসীম অর্থাভাবে নিজের চিকিৎসাটুকুও করাতে পারছেন না।

জসীমের বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামে। ধলু খাঁ ও কোহিনুর বেগমের দুই ছেলের মধ্যে জসীম বড়। ধলু খা এলাকায় দিনমজুরি করেন। বড় ছেলে জসীম নির্মাণশ্রমিক ও ছোট ছেলে সোহেল খান (১৯) টাইলস মিস্ত্রি। মোটামুটি চলছিল পরিবারটি। গত বছর জসীম তাঁর স্ত্রী সোনিয়া হাসনা এবং দুই শিশুসন্তান আহম্মদ মাহাদি (৩) ও নাবিয়া জুঁইকে (৮) নিয়ে আদমজীর কদমতলী এলাকার ভাড়া বাসায় ওঠেন। স্ত্রী সোনিয়া হাসনা সেখানে একটি পোশাক তৈরির কারখানায় কাজ নেন।

জসীম প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৯ জুলাই আন্দোলন চলাকালে তিনি মিছিলে যোগ দেন। সন্ধ্যার সময় চিটাগাং রোডে সংঘর্ষ বেধে যায়। একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। চারটি গুলি বিদ্ধ হয় তাঁর শরীরে। এর মধ্যে তিনটি রাবার বুলেট ও একটি মেটাল বুলেট। গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে মিছিলের লোকজন তাঁকে প্রথমে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তিনি গ্রেপ্তারের ভয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসেন। বাসায় চলছিল তাঁর চিকিৎসা। স্বামী-স্ত্রীর দুজনেরই কাজ বন্ধ। তাই আয় নেই। হাতে যেটুকু জমা ছিল, তা চিকিৎসার ওষুধ কিনতেই শেষ হয়ে যায়। এই অবস্থায় ৩১ জুলাই তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে পটুয়াখালীতে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন।

জসীম বলেন, এখনো গুলিবিদ্ধ স্থানে যন্ত্রণা ও চুলকানি হচ্ছে। ঢাকার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে অনেক টাকার প্রয়োজন। আয় নেই, তাই ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছে না।

জসীমের পিতা ধলু খাঁ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এমনিতেই তেমন কাজ নেই। ছোট ছেলেরও কাজ নেই। বাড়িতে আহত জসীম ও তাঁর পরিবার। কীভাবে সংসার চলবে আর কীভাবেই চলবে আহত জসীমের চিকিৎসা, তা নিয়ে তাঁদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। জসীমের চিকিৎসার ব্যাপারে তিনি সবার সহযোগিতা চান।