গত ২৯ আগস্ট রাতে আটক হন জামালপুর শহর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুর রহমান। পরের দিন নাশকতার মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। ২ সেপ্টেম্বর অপর একটি মামলায় আসামি করা হয় মমিনুরকে। সেই মামলার এজাহার বলছে, ১ সেপ্টেম্বর রাতে নাশকতার উদ্দেশ্যে জামালপুর শহরের একটি মাঠে গিয়েছিলেন মমিনুর।
ডিবি পুলিশের করা মামলার এজাহার ঠিক থাকলে মমিনুর কারাগার থেকে বেরিয়ে গিয়ে নাশকতার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। বাস্তবে মমিনুর তখনো কারাগারে ছিলেন, এখনো কারাগারেই আছেন।
জানতে চাইলে জামালপুর কারাগারের জেলার আবু ফাতাহ ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, চার দিন ধরে (৩০ আগস্ট থেকে) বিএনপির নেতা মমিনুর রহমান কারাগারেই আছেন।
কারাগারে থাকা মমিনুর কীভাবে নাশকতার চেষ্টা করলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে জামালপুর গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি মুশফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর (মমিনুর) নামে দুটি মামলা আছে। আগের মামলায় তাঁর বাবার নাম মৃত শাহ ফিরোজ মিয়া ও গ্রাম ফুলবাড়ীয়া (জিগাতলা) উল্লেখ করা হয়েছে। আর পরের মামলায় বাবার নাম মৃত ফিরোজ মিয়া, গ্রাম শুধু জিগাতলা উল্লেখ আছে। ফলে একই ব্যক্তির নাম কি না, বিষয়টি তাঁরা যাচাই-বাছাই করছেন।
সহিংসতা ও নাশকতার চেষ্টার অভিযোগ এনে মমিনুরের মতো জামালপুরে বিএনপির দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গত ৩৬ দিনে কমপক্ষে ৩০টি মামলা হয়েছে। বিএনপির নেতাদের দাবি, এর সবই ‘গায়েবি মামলা’। অর্থাৎ ঘটনা ঘটেনি, তারপরও মামলা দেওয়া হয়েছে। যার কারণে প্রায় সব মামলার বিবরণ ও ধারা প্রায় একই রকম। মূলত দলটির নেতা-কর্মীদের শায়েস্তা করতেই কথিত এসব মামলা দেওয়া হচ্ছে।
গত ২৯ জুলাই থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশ বাদী হয়ে জামালপুর সদরসহ সাতটি উপজেলায় মামলাগুলো করেছে। এসব মামলায় আসামি হিসেবে বিএনপির ৬৫১ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর অজ্ঞাতনামা আসামি ১ হাজার ৫৯১ জন।
মামলায় উল্লেখ করা ১০টি ঘটনাস্থল ১, ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর ঘুরে দেখেছেন প্রথম আলোর দুই প্রতিনিধি। স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও কয়েকজন সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনাস্থলে যানবাহন ভাঙচুর বা নাশকতার চেষ্টার মতো কোনো ঘটনাতো দূরে থাক, বিএনপির নেতা-কর্মী কিংবা লোকজনকে সেসব স্থানে জমায়েত হতেও দেখেননি তাঁরা।
এক প্রশ্নের জবাবে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, পুরো জেলায় বর্তমানে প্রায় ৪০ নেতা-কর্মী কারাগারে আছেন।
জামালপুর পৌর শহরের ব্যস্ততম সর্দারপাড়ার আকাবা আলিয়া মাদ্রাসার দক্ষিণ পাশে একটি মাঠ। মাঠের আশপাশে ওই মাদ্রাসা ছাড়াও বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। এই মাঠে ৩০ জুলাই রাত ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের কিছু দুষ্কৃতকারী নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য গোপন বৈঠকে জমায়েত হন। ওই বৈঠকের খবর পেয়ে সদর থানার ছয়জন উপপরিদর্শক (এসআই) ও আটজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাত ১১টা ৪৫ মিনেটে ওই মাঠে পৌঁছান। তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় তাঁরা জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক মো. এমরান হোসেনসহ বিএনপির ১২ নেতা-কর্মীকে আটক করেন।
পরের দিন ৩১ জুলাই জামালপুর সদর থানার এসআই মো. নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওপরের ঘটনার বর্ণনাটি মামলার এজাহার থেকে নেওয়া। ওই মামলায় দুজন সাক্ষীর সই নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ ভয় দেখিয়ে ওই দুই ব্যক্তির স্বাক্ষর নিয়েছে। যে দুজনের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে, তাঁদের একজন মো. রুহুল আমীন। তিনি মামলার ১ নম্বর সাক্ষী। আর মো. আজিজুল ইসলাম ২ নম্বর সাক্ষী। তাঁরা দুজনই ১৬ আগস্ট জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হলফনামা দিয়েছেন।
গত এক মাসে হওয়া ৩০টি মামলার মধ্যে জামালপুর সদরে ৬টি, সরিষাবাড়ীতে ৭টি, দেওয়ানগঞ্জে ৪টি, মাদারগঞ্জে ৩টি, ইসলামপুরে ৩টি, মেলান্দহে ৪টি ও বকশীগঞ্জ থানায় ৩টি মামলা রয়েছে।
হলফনামায় ১ নম্বর সাক্ষী লিখেছেন, ‘আমি ওই মামলার জব্দ তালিকার ১ নম্বর সাক্ষী। গত ৩০ জুলাই রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে আকাবা আলিয়া মাদ্রাসার দক্ষিণের খালি জায়গা থেকে দেশীয় তৈরি অবিস্ফোরিত ককটেলসদৃশ ৮টি বস্তু, ২৫টি ইটের টুকরা ও ২৫টি বাঁশের লাঠি উল্লিখিত ঘটনার স্থান থেকে আমার উপস্থিতিতে উদ্ধার হয়নি। ঘটনাস্থলের দক্ষিণ পাশে আমার বাড়ি। ওই রাতে খালি জায়গাটিতে কোনো লোক জমায়েত হয়নি। আটক আসামিদের আমার জানামতে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আসামিদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে জব্দ তালিকায় আমার স্বাক্ষর নেন। প্রকৃতপক্ষে মামলায় উল্লিখিত জায়গায় কোনো লোক জমায়েত হয়নি। আমি জানিয়া, শুনিয়া, বুঝিয়া ও স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে আদালতে অ্যাফিডেভিট দাখিল করিলাম।’ ২ নম্বর সাক্ষী মো. আজিজুল ইসলামও প্রায় একই ধরনের হলফনামা দিয়েছেন আদালতে।
জানতে চাইলে মো. রুহুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলাটির বাদী এসআই নজরুল ইসলাম আমার পরিচিত। তিনি মোবাইলে ফোন দিয়ে আমাকে বাসা থেকে বের করেন। পরে ওই মামলায় সাক্ষী হতে বলেন। প্রথমদিকে আমি না করেছি। বলেছি, এখানে তো কিছুই হয়নি। তাহলে সমস্যা হবে না? তখন তিনি (এসআই) বলেন, “কোনো সমস্যা হলে আমি তো আছিই।” তারপর সাক্ষী হই। কিন্তু সত্যি কথা, ওই সময় সেখানে কেউ ছিলও না। মামলার কাউকে আমি চিনিও না। পরে আমি ব্যক্তিগতভাবে আদালতে অ্যাফিডেভিট দিয়েছি।’
একই মামলার ২ নম্বর সাক্ষী মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ওই দিন রাত তিনটার দিকে পুলিশ এসে একটি কাগজের মধ্যে স্বাক্ষর দিতে বলে এবং তারা (পুলিশ) বলে, “কিছুই হবে না, আপনি স্বাক্ষর দেন।” পরে আমার স্বাক্ষর নেওয়া হয়। কিন্তু ওই ঘটনা সর্ম্পকে আমি কিছুই জানি না।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে এসআই নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দুই সাক্ষী নিছক মিথ্যা কথা বলছেন। আমরা ঘটনা যেটা পেয়েছি, ওনারা তো স্বেচ্ছায় ঘটনাস্থলে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন।’
গত এক মাসে হওয়া ৩০টি মামলার মধ্যে জামালপুর সদরে ৬টি, সরিষাবাড়ীতে ৭টি, দেওয়ানগঞ্জে ৪টি, মাদারগঞ্জে ৩টি, ইসলামপুরে ৩টি, মেলান্দহে ৪টি ও বকশীগঞ্জ থানায় ৩টি মামলা রয়েছে।
বেশির ভাগ মামলায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যুৎ কার্যালয়ে নাশকতা, সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, নৈরাজ্য করার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক করতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাঠে জমায়েত হন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে আসামিদের আটক করা হয়।
১০টি মামলার এজাহার ধরে ঘটনাস্থলে যান প্রথম আলোর দুই প্রতিনিধি। স্থানীয় লোকজন ও এজাহারে উল্লেখ করা সময়ে ঘটনাস্থলে ছিলেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় তাঁদের। বিএনপির জমায়েত কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো তৎপরতার কথা তাঁরা বলতে পারেননি।
৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে জামালপুর শহরের শাহাপুর এলাকার সিকদার পাওয়ার প্ল্যান্টের বিপরীতে মিফতাহুল জান্নাত মহিলা মাদ্রাসা–সংলগ্ন মাঠে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে। এই মাঠ থেকেই ১ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া নয়টার দিকে হৃদয় মিয়া নামের একজনকে দুটি অবিস্ফোরিত ককটেলসহ আটক করা হয়েছিল। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পালিয়ে যাওয়া বিএনপির ২৫ জন নেতা-কর্মীর নাম পাওয়া যায়। নাশকতার উদ্দেশ্যে তাঁরা গোপন বৈঠক করতে এসেছিলেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করে পুলিশ। জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে, অজ্ঞত ৪০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করেন।
মিফতাহুল জান্নাত মহিলা মাদ্রাসা–সংলগ্ন ঘটনাস্থলে ও আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে ১ সেপ্টেম্বর রাতে মাঠে লোকজন জড়ো হওয়া বা নাশকতার চেষ্টার কিছু পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলের দক্ষিণ পাশেই ওই মাদ্রাসা। মাদ্রাসার সুপার মো. হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ১ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওই মাঠে কোনো জমায়েত বা লোকজন ছিল না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনকে আসতে দেখেননি তিনি। এই প্রতিবেদকের কাছ থেকেই এ ঘটনা প্রথম শুনলেন তিনি।
৩১ জুলাই দায়ের করা অপর একটি মামলার ঘটনাস্থল ছিল জামালপুর পৌর শহরের সর্দারপাড়ার আকাবা আলিয়া মাদ্রাসার দক্ষিণ পাশের একটি মাঠ। এ মামলার এজাহারেও উল্লেখ করা হয় প্রায় একই কথা, দুষ্কৃতকারীরা নাশকতার উদ্দেশ্যে জমায়েত হয়েছিলেন। জামালপুর সদর থানার এসআই মো. নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে, অজ্ঞাতনামা ৫০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করেন।
২ সেপ্টেম্বর সকালে ওই মাঠে গিয়ে আশপাশের লোকজনকে ওই রাতের ঘটনা সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়। কেউ এমন ঘটনা দেখেছেন বা শুনেছেন, বলতে পারেননি। ওই মাঠের প্রবেশপথেই খাদ্যপণ্যের এক দোকানি প্রথম আলোকে বলেন, ৩০ জুলাই সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তিনি ওই মাঠে কোনো লোকজনের জমায়েত হতে দেখেননি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অভিযানও দেখেননি।
৩০ আগস্ট করা একটি মামলার ঘটনাস্থল ছিল জামালপুর শহরের জগবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে পুরাতন ঈদগাহ মাঠ। জেলা ডিবির এসআই মো. আবু রায়হান বাদী হয়ে ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে, অজ্ঞাতনামা ৫০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করেন।
২ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওই মাঠ–সংলগ্ন একটি মুদিদোকানির মালিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই রাতে এখানে কেউ জমায়েত হয়নি বা পুলিশের কোনো দলকে আসতে দেখিনি।’ ওই এলাকায় আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করেও এজাহারে বর্ণিত ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
২৩ আগস্ট হওয়া একটি মামলার ঘটনাস্থল ছিল সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের বিলুপ্ত অনন্ত সিনেমা হলের পরিত্যক্ত ফাঁকা মাঠ। জামালপুর সদর থানার এসআই মো. আনোয়ারুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৩০ জনকে আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন।
২ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওই মাঠের আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মামলার বিবরণ অনুযায়ী কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই মাঠের পূর্ব পাশে অটোরিকশার খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রি করেন এমন একটি দোকানের মালিক বললেন, ‘ওই দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে কোনো জমায়েত বা পুলিশের অভিযান দেখি নাই, শুনিও নাই।’
২৯ আগস্ট জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার ছাতারিয়া ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদার উচ্চবিদ্যালয় মাঠে রাতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জমায়েত হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। ওই ঘটনায় সরিষাবাড়ী থানার এসআই আবদুল হান্নান বাদী হয়ে এজাহারনামীয় ১৫ ও অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে থানায় মামলা করেন। ২ সেপ্টেম্বর ওই বিদ্যালয়ের পাশের বাসিন্দা ফজল আলী (৫৫) বললেন, ‘আমরা এখানেই থাকি। গত এক মাসেও স্কুলের মাঠে কোনো দলের মিটিং হয়নি।’
১৭ আগস্ট সরিষাবাড়ীর সাইঞ্চারপাড় জোড় ব্রিজের সামনে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা জমায়েত হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। সরিষাবাড়ী থানার এসআই শিব্বির আহমেদ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে, অজ্ঞাতনামা ৬০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন। ২ সেপ্টেম্বর ব্রিজের পাশের দোকানদার আমির হোসেন জানান, ওই রাতে এখানে কোনো ঘটনা ঘটেনি। অনেক দিন ধরে এখানে কোনো দলের বৈঠক হয়নি।
এক মাসে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা হওয়ার বিষয়ে জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। ওই সব মামলায় বলা আছে, সহিংসতা বা নাশকতার চেষ্টা অথবা সন্ত্রাসবিরোধী মামলা। যাঁদের নিয়ে মামলাগুলো করা হয়েছে, তাঁদের অবশ্যই পূর্বপরিকল্পনা ছিল। জামালপুর শহরটাকে একটু বিশৃঙ্খল করা যায় কীভাবে। ফলে জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য আমাদের কাছে মনে হয়েছিল, এই জিনিসগুলো তাঁরা ঠিক করছেন না। এর পরিপ্রেক্ষিতেই মামলা নেওয়া হয়।’
মমিনুর রহমান নামের বিএনপির এক নেতা কারগারে থাকা অবস্থায় অপর এক মামলায় আসামি করা প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি আমাদের তদন্ত করে দেখতে হবে।’
ভয় দেখিয়ে সাক্ষীদের স্বাক্ষর নেওয়া প্রসঙ্গে মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আপনি অনেক কিছুই পেয়েছেন। আমি কিন্তু একটি পরিবারের কাছ থেকেও ফোন পাইনি যে তাঁদের কাছ থেকে জোরপূর্বক সাক্ষী নেওয়া হচ্ছে বা হয়রানি করা হচ্ছে।’
৩০ আগস্টের মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। ওই দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। তারপরও আমাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। গত এক মাসে সদর উপজেলায় ছয়টি মামলা হয়েছে। সব মামলাই মিথ্যা।শফিকুল ইসলাম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা বিএনপি, জামালপুর
জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান পুলিশ সুপার যোগ দেওয়ার এক দিন পরই হঠাৎ ১২ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধেও গায়েবি মামলা করা হয়। গত এক মাসে জেলায় ৩০টির বেশি মামলা হয়েছে। প্রত্যেকটি মামলার ধরন একই।’
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘৩০ আগস্টের মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। ওই দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। তারপরও আমাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। গত এক মাসে সদর উপজেলায় ছয়টি মামলা হয়েছে। সব মামলাই মিথ্যা।’
বিরোধী পক্ষকে এভাবে মামলা দিয়ে হয়রানি করা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন উল্লেখ করে জামালপুরের এক মানবাধিকারকর্মী গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দমনে পুলিশ গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করছেন। এটি গণতন্ত্রের ভাষা নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন শফিকুল ইসলাম, সরিষাবাড়ী, জামালপুর]