গুলিতে নিহত আবু সাঈদের স্মরণে রংপুরের পার্কের মোড়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি তোলা
গুলিতে নিহত আবু সাঈদের স্মরণে রংপুরের পার্কের মোড়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি তোলা

আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থান দেখতে আসছেন মানুষ, স্বীকৃতির দাবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়েছে। এত কাছ থেকে নিরস্ত্র এক শিক্ষার্থীর বুকে গুলি চালানো নিয়েও দেশ-বিদেশে উঠেছে নানা প্রশ্ন। আবু সাঈদকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে যে স্থানে গুলি করা হয়েছে, সেই স্থান দেখতে মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানটি দেখতে আসছেন উৎসুক জনতা। কেউ কেউ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।

সম্প্রতি সেই স্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। তবে সেই শিক্ষকের নাম লেখা না থাকলেও শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণে লেখা ‘বিনম্র শ্রদ্ধা হে মৃত্যুঞ্জয়ী বীর সন্তানেরা, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো সকল অধমেরে।’

এরই মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ‘শহীদ আবু সাঈদ গেইট’ নামকরণ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে ঘটনাস্থল-সংলগ্ন পার্কের মোড়ের নাম করেছেন ‘শহীদ আবু সাঈদ চত্বর’। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নাম দুটির দাপ্তরিক ও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন।

শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণে লেখা ‘বিনম্র শ্রদ্ধা হে মৃত্যুঞ্জয়ী বীর সন্তানেরা, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো সকল অধমেরে’। সম্প্রতি তোলা

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটক ‘শহীদ আবু সাঈদ’ নামকরণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘যে ১ নম্বর ফটকে ঘটনা ঘটেছে, সেই ফটকের নামকরণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অফিশিয়ালি বাস্তবায়নের চিন্তাভাবনা করবে, এমনটাই প্রত্যাশা করি।’

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

গতকাল বুধবার দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে গিয়ে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ওই এলাকায় শিক্ষার্থী কম। কিছু দোকান খোলা থাকলেও বেচাকেনাও তেমন নেই। তবে মানুষের আনাগোনা আছে। স্থানীয় লোকজন চলাচল করছেন। কেউ কেউ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে স্থানটি দেখে আবার নিজ গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ‘শহীদ আবু সাঈদ গেইট’ নামকরণ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা

ঢাকার একজন বাসিন্দা চাকরিসূত্রে রংপুরে আসেন। তিনি আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থানটিতে এসেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত ঘটনাস্থলটি নিজের চোখে তিনি দেখেছেন। স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ছবিও তুলেছেন।

পার্কের মোড়ে খান ফার্মেসির মালিক আহেদ আলী খান বলেন, তাঁদের চাওয়া, পার্কের মোড়ের নাম ও বিশ্ববিদ্যালয় গেটটির নাম গুলিতে নিহত আবু সাঈদের নামেই হোক।

১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তাঁর বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালি ইউনিয়নের জাফরপুর বাবনপুর গ্রামে।