বিভিন্ন এলাকার মুসল্লিদের আগমনে ভরে উঠেছে গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে
বিভিন্ন এলাকার মুসল্লিদের আগমনে ভরে উঠেছে গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে

ইলিয়াস কান্ধলভীর আমবয়ানে শুরু ইজতেমা, জুমা পড়াবেন ইউসুফ কান্ধলভী

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীরে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। আজ শুক্রবার ফজরের নামাজের পর ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর ছোট ছেলে ইলিয়াস বিন সাদ কান্ধলভীর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে এ পর্বের ইজতেমা। ইজতেমা উপলক্ষে তুরাগতীরে এরই মধ্যে মুসল্লির ঢল নেমেছে। দেশি-বিদেশি মুসল্লির অংশগ্রহণে ভরে গেছে ইজতেমা মাঠ।

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার গণমাধ্যম সমন্বয়ক মো. সায়েম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের ইজতেমা শুরু হয়েছে। ফজরের নামাজের পর আমবয়ান করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর ছোট ছেলে মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ কান্ধলভী। তিনি বয়ান করেন উর্দুতে। পরে তা বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশি মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। আর দুপুরে জুমার নামাজ পড়াবেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী।’

তাবলিগ জামাতের মধ্যে বিরোধের কারণে কয়েক বছরের মতো এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। গত রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে তাবলিগের প্রথম পক্ষ বা মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের ইজতেমা। চার দিন বিরতি দিয়ে আজ শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পক্ষ বা মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের ইজতেমা। আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় মুসল্লিদের ঢল। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় যোগ দিতে গত বুধবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসল্লিরা আসতে থাকেন। এর মধ্যে বুধবার দিবাগত রাত ও গতকাল বৃহস্পতিবার মুসল্লিরা আসেন সবচেয়ে বেশি। তাঁদের পদচারণে বিশাল জনসমাগমে পরিণত হয় ইজতেমা মাঠ। পরে গতকাল সকাল থেকেই চলছিল বয়ান। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমা শুরু হয় আজ ফজরের পর থেকে।

সকাল সাড়ে ৭টায় সরেজমিন দেখা যায়, ইজতেমা মাঠের চারপাশে আটটি সড়ক, পাঁচটি ভাসমান সেতুসহ ১৩টি প্রবেশপথ। প্রতিটি প্রবেশপথেই মুসল্লিদের জটলা। তাঁরা কেউ বাস, কেউ ট্রাক, কেউবা পিকআপ ভ্যানে চড়ে এসেছেন ইজতেমা মাঠে। তাঁদের সবার সঙ্গে ব্যাগসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। মুসল্লিরা মাঠে ঢুকেই নিজ নিজ খিত্তায় (এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত জায়গা) অবস্থান নিচ্ছেন। কেউ কেউ জুমা নামাজে অংশ নিতে আসছেন রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকা থেকে। এতে ভরে গেছে প্রায় পুরো মাঠ।

কথা হয় নরসিংদীর ষাটোর্ধ্ব আবদুল আউয়ালের সঙ্গে। তাঁর অবস্থান ৩৪ নম্বর খিত্তায়। তিনি বলেন, ‘আমরা ইজতেমায় আসি মনের টান থেকে। আমাদের মধ্যে কোনো পক্ষ-বিপক্ষ নাই। শুধু আল্লাহর পথে কাজ করার জন্য এখানে আসি। ১ বছর পর পুরোনো সাথিদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় খুব ভালো লাগছে।’

এদিকে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় মাওলানা সাদ কান্ধলভী আসার ব্যাপারে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। গতকাল দুপুরে ইজতেমা মাঠ পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাওলানা সাদ সাহেবকে আনার জন্য তাঁর (সাদ) পক্ষের লোকজন কাজ করছেন। সরকারের সঙ্গেও তাঁদের কথা চলছে। আমরাও এ ব্যাপারে আলোচনা করছি। সমঝোতার মধ্যে হয়তো তাঁকে (মাওলানা সাদ) আনা সম্ভব হতে পারে। আমরা সেই চেষ্টাটাই করছি।’

গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ইজতেমায় আগত পাঁচ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইজতেমা আয়োজকেরা। এর মধ্যে চার মুসল্লির নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন শেরপুর সদরের মো. আবুল কালাম (৬৫), নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়ার আবদুল হেলিম মিয়া (৬৫) এবং দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার মো. জহির উদ্দিন (৭০) ও জামালপুরের নবীর উদ্দিন (৬৫)। এই চারজনই বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন বলে জানান ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম।