নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে কথিত স্ত্রীর করা ধর্ষণ মামলায় হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মামুনুল হককে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেসমিন আরা বেগম এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় মামুনুল হক আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালতের ভারপ্রাপ্ত সরকারি কৌঁসুলি মো. রোমেল মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাঁকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী এ কে এম ওমর ফারুক নয়ন প্রথম আলোকে জানান, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছিল। আদালতকে তাঁরা বলেছিলেন যে পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক যোগসাজশে সংঘটিত হয়েছে। এই মামলার বাদী শারীরিক পরীক্ষা করাতে রাজি হননি। কারণ, তিনি স্বীকার করেছেন, মামুনুল হক তাঁর বৈধ স্বামী। একই সঙ্গে বাদীর ছেলে সাক্ষ্য দিতে এসে বলেছিলেন, তাঁর মা মামুনুল হকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের তুলে এনে আটকে রেখে বলপ্রয়োগ করে মামলা করানো হয়েছিল।
২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টের একটি কক্ষে কথিত স্ত্রীসহ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় হেফাজত ও মাদ্রাসার ছাত্ররা রিসোর্টে হামলা চালিয়ে তাঁদের ছিনিয়ে নেন।
ওই ঘটনার ১৫ দিন পর ওই বছরের ১৮ এপ্রিল মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ। রয়েল রিসোর্ট–কাণ্ডের ঘটনার ২৭ দিন পর ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় হাজির হয়ে কথিত স্ত্রী বাদী হয়ে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল ধর্ষণের মামলায় অভিযোগ গঠন করেন।
‘আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে’
দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনে বসে শেখ হাসিনা চরিত্র হনন করার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। তিনি বলেন, ‘গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল। নির্মম ও বর্বরভাবে গোটা পরিবারকে জিম্মি করে হত্যার ভয় দেখিয়ে নানাভাবে আমাকে ও আমার পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়ার পাঁয়তারা করেছিল। বিচারব্যবস্থা তাঁরা তাঁদের স্বচ্ছতা রক্ষা করেছেন। এ ধরনের একটি অপবাদমূলক মিথ্যা মামলা থেকে আমাকে রেহাই ও খালাস দিয়েছেন।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ মামলার রায়ে খালাস পেয়ে সাংবাদিকদের এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
রায়ের আদেশে বেকসুর খালাস পাওয়ায় দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মামুনুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দোসর আইনজীবী ছাড়া সেদিন সব আইনজীবী আমাকে সান্ত্বনা ও সাহস জুগিয়েছেন। তাঁরা আমার পাশে ছিলেন।