দুজনের সহযোগিতায় বিএনপির ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে আসেন স্থানীয় এক বৃদ্ধ। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আক্কেলপুর সরকারি এফইউ পাইলট উচ্চবিদ্যায় মাঠে
দুজনের সহযোগিতায় বিএনপির ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে আসেন স্থানীয় এক বৃদ্ধ। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আক্কেলপুর সরকারি এফইউ পাইলট উচ্চবিদ্যায় মাঠে

আক্কেলপুরে বিএনপির কাউন্সিল

‘হামার জীবনে দলের ইক্কা জাঁকজমক নির্বাচন দেখিনি’

প্রার্থীদের রঙিন ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর শহর। বিশাল প্যান্ডেল ও তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সড়কের দুই পাশে রশিতেও ঝুলছে ব্যানার-পোস্টার। আক্কেলপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল উপলক্ষে এমন সাজসজ্জা। দুই দশক পর আজ বুধবার এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে ২০০৩ সালে সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

আক্কেলপুর ফজরউদ্দিন (এফইউ) পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে কাউন্সিল ঘিরে দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বেশ উচ্ছ্বসিত। সেই উৎসবের আমেজ ছড়িয়েছে আশপাশ এলাকায়। স্থানীয় ভ্যানচালক রুবেল হোসেন বলেন, ‘হামার জীবনে দলের ইক্কা জাঁকজমক নির্বাচন দেখিনি। মনে হওচে চেয়ারম্যান-মেম্বরদের ভোট হচ্চে।’

যুবদলের রাজশাহী বিভাগের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান সুইট ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, আক্কেলপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির কাউন্সিলে একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক—এই তিনটি পদে গোপন ব্যালটে ভোটাভুটি হবে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদে চারজন প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা হলেন কামরুজ্জামান কমল (সাইকেল প্রতীক), আলমগীর চৌধুরী বাদশা (চেয়ার), এম কেরামত আলী (ঘোড়া), আবু তালেব মণ্ডল (ঘড়ি)। সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন প্রার্থী হলেন আমিনুর রশিদ ইকু (ছাতা প্রতীকী), রফিকুল ইসলাম চপল (ফুটবল), আরিফ ইফতেখার আহাম্মদ রানা (মোরগ)। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে পাঁচজন প্রার্থী হলেন মামুনুর রশিদ পিন্টু (হাতি), এ কে আজাদ (আম), মোশারফ হোসেন (কাঁঠাল), সামিউল হাসান (আনারস) ও মিজানুর রহমান মজনু (তাল)।

আক্কেলপুর পৌর বিএনপির সভাপতি পদ তিনজন প্রার্থী হলেন মো. আবদুল ওয়াহেদ প্রামাণিক (সাইকেল), মো. আফাজ উদ্দিন (চেয়ার), আবু রাসেল বিদ্যুৎ চৌধুরী (ঘোড়া)। সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন প্রার্থী হলেন মামুনুর রহমান (ছাতা), আমিনুল ইসলাম পল্টু (মোরগ), আবদুর রাজ্জাক (ফুটবল)। সাংগঠনিক সম্পাদক দুজন প্রার্থী হলেন আবু রায়হান খান (হাতি), আনিছুর রহমান (আনারস)। উপজেলা বিএনপিতে ৩৫৫ জন ও পৌরসভায় ৬৩৯ জন ভোটার আছেন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর বেলা তিনটায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এর পর ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলের ভোট গ্রহণ চলছে। বুধবার সকালে আক্কেলপুর সরকারি এফইউ পাইলট উচ্চবিদ্যায়ের একটি কক্ষে

দলীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, তাঁরা ১৭ বছর ধরে অত্যাচার, জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকার তাঁদের দলীয় কোনো কর্মসূচি করতে দেয়নি।
নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, এর আগে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় দলীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন দেওয়ান কোরবান আলী মাস্টার উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জামশেদ আলম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এর পর দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি। উপজেলা ও পৌরসভায় বারবার বিএনপি আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলেছে। কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব আসবে। আগামী দিনে তাঁরাই উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন। তবে ভোটার তালিকা নিয়ে দলের অনেক নেতা-কর্মীর মধ্যে অসন্তষ্টি আছে।

ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান বলেন, জেলা-উপজেলা ও পৌর বিএনপি ভোটার তালিকা করেছে। নির্বাচন কমিশন খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে। তখন নির্বাচন কমিশনে কেউ অভিযোগ করেননি। কাউন্সিলের উৎসবমুখর পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এমন কথা বলা হচ্ছে। বিএনপি একটি বৃহৎ দল। একটি ওয়ার্ডে হাজারো নেতা-কর্মী রয়েছেন। প্রতিনিটি ওয়ার্ড থেকে সবাইকে ভোটার করা সম্ভব নয়।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আলেকের মোড়ে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আমিনুল ইসলাম পল্টু (মোরগ) টাকার বিনিময়ে ভোট কিনছেন বলে অভিযোগ তুলে তাঁকে ধাওয়া করেন প্রতিদ্বন্দ্বী সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মামুনুর রহমানের (ছাতা) কর্মী-সমর্থকেরা। পরে আমিনুল ইসলাম আলেকের মোড়ের নিজ বাসায় ঢুকে রক্ষা পান।

পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মামুনুর রহমানের ছোট ভাই মোমিনুল ইসলাম লিটন অভিযোগ করেন, ‘আমিনুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ব্যাগে করে টাকা নিয়ে আলেকের মোড়ে গিয়ে ভোট কিনছিলেন। আমার এক আত্মীয়কে টাকা দিতে গিয়ে ঘটনাটি জানাজানি হয়। আমরা তখন ছুটে এসেছি।’ তবে অভিযোগের বিষয়ে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মামুনুর রহমানের লোকজন আমার বিরুদ্ধে অসত্য ও ভিত্তিহীন কথা প্রচার করে ভোট কাটার চেষ্টা করছেন।’

জয়পুরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, পরিকল্পিতভাবে ভোটার তালিকা করা হয়েছে। অনেক ত্যাগী নেতাদের নাম ভোটার তালিকায় নেই। তিনিসহ আক্কেলপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ২২ জন ও পৌরসভায় ৪ জনকে ভোটার তালিকায় নাম রাখা হয়নি। ভোটার তালিকায় আটজনের নাম দেখে তিনি হতবাক হয়েছেন, যাঁরা আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন।