বান্দরবানের মারাইংতং পাহাড়চূড়ায় আবার চালু হচ্ছে টেন্ট ক্যাম্পিং

বান্দরবানের ১ হাজার ৬০০ ফুট উঁচু মারাইংতং পাহাড়ের চুড়ায় পর্যটকদের টেন্ট ক্যাম্পিং
ছবি: সংগৃহীত

প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ থাকা বান্দরবানের একমাত্র তাঁবুবাস পর্যটন (টেন্ট ক্যাম্পিং) আবার চালু হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আলীকদম উপজেলার ১ হাজার ৬০০ ফুট উঁচু মারাইংতং পাহাড়ের চূড়ায় তাঁবু খাঁটিয়ে ক্যাম্পিং ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে বর্তমানে সেখানে দিনে পর্যটক যেতে পারলেও তাঁবুতে রাত যাপন করতে পারছেন না। এ কারণে ক্যাম্পিং করতে আসা পর্যটকেরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে পর্যটননির্ভর স্থানীয় জনগোষ্ঠীও বেকার হয়ে পড়েছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই টেন্ট ক্যাম্পিং আবার চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আলীকদম উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ১ হাজার ৬০০ ফুট উঁচু মারাইংতং পাহাড়ের চূড়ায় একটি বৌদ্ধজাদী বা প্যাগোডায় বৌদ্ধধর্মীয় মেলার আয়োজন ঘিরে এই ট্যুরিস্ট ক্যাম্প গড়ে উঠেছে। ২০১৪ সাল থেকে এখানে টেন্ট ক্যাম্পিং শুরু হয়। শীতের শুরু থেকে বর্ষার আগপর্যন্ত (নভেম্বর থেকে এপ্রিল) এই তাঁবুবাস পর্যটন চলে। এই পাহাড়চূড়া থেকে পাহাড়ের পাদদেশে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা মাতামুহুরি নদী, নদীর তীরে নকশিকাঁথার মতো ফসলের মাঠ, নীল আকাশের সঙ্গে সবুজবেষ্টিত পাহাড়ের মিতালি উপভোগ করা যায়। জ্যোৎস্না রাতে তাঁবু খাঁটিয়ে আড্ডামুখর রাতযাপন, অনিন্দ্যসুন্দর প্রকৃতি উপভোগ, বনভোজন বা বারবিকিউয়ের অভিজ্ঞতা যে পর্যটকের হয়েছে, তিনি বারবার ফিরে আসতে চান এ পাহাড়ে।

২৫ জানুয়ারি থেকে তিন দিনব্যাপী বৌদ্ধ মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে মারাইংতং বিহারাধ্যক্ষ উ উইচারা মহাথের জানিয়েছেন।

বান্দরবানের মারাইংতং পাহাড়ের চুড়ায় শীতের শুরু থেকে বর্ষার আগপর্যন্ত টেন্ট ক্যাম্পিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে

আলীকদমের চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, গত ডিসেম্বরের শুরুতে বিপুলসংখ্যক পর্যটক আসা শুরু হলে ক্যাম্প পরিচালনাকারীদের মধ্যে কিছু বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে ১০ ডিসেম্বর মারাইংতং ক্যাম্প বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে এলাকার দরিদ্র মানুষ কর্মসংস্থান ও আয় হারিয়েছেন।

সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য (১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড) আয়েশা বেগম বলেন, তাঁবুতে পর্যটক থাকা বন্ধ হওয়ায় খাবারের দোকানি, যানবাহনচালক, তাঁবু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় ফল বিক্রেতাসহ এলাকার সবাই কর্মসংস্থান হারাতে বসেছেন। পর্যটন পরিচালনায় কোথাও দুর্বলতা ও সমস্যা থাকলে সমাধান করে দ্রুত ট্যুরিস্ট ক্যাম্প চালু করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

আলীকদম উপজেলাে মারাইংতং পাহাড়ের চূড়ায় একটি বৌদ্ধজাদী বা প্যাগোডায় বৌদ্ধধর্মীয় মেলার আয়োজন ঘিরে এই ট্যুরিস্ট ক্যাম্প গড়ে উঠেছে

সম্প্রতি মারাইংতং পাহাড়ের ট্যুরিস্ট ক্যাম্পে গিয়ে খুব কমসংখ্যক পর্যটক দেখা গেছে। তাঁবু ব্যবসায়ী দুলাল বড়ুয়া ও রিদওয়ান জানান, ২৫০ থেকে ৩০০টি তাঁবুতে প্রতিদিন একসঙ্গে ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ পর্যটকের রাত কাটানোর ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। ডিসেম্বরে ট্যুরিস্ট ক্যাম্প বন্ধ করে দেওয়ার পর তাঁরা সবাই বেকার হয়ে পড়েছেন। দিনে কিছু লোক ঘুরতে এলেও এতে তাঁদের তেমন আয়রোজগার হয় না।

ক্যাম্পিং করতে আসা মুফতাসিন ও সাজিদ আহমেদ বলেন, তাঁরা ছয়জনের একটি দল তাঁবুতে থাকার জন্য এসেছেন। কিন্তু অনেক টাকা খরচ ও সময় নষ্ট করে এসে জানতে পারেন, ক্যাম্প বন্ধ। বন্ধ যদি করতেই হয়, তাহলে গণমাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। শত শত লোক এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

মারাইংতং পাহাড়ের চূড়া থেকে পাদদেশে লেগে থাকা মেঘের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করা যায়

এ ব্যাপারে আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার তবিদুর রহমান আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, মারাইংতং–চূড়ায় কিছু ট্যুরিস্ট গাইড তাঁবুতে দোচুয়ানি (স্থানীয় মদ) ও গাঁজা বিক্রি করেন। নারী উত্ত্যক্তের ঘটনাও ঘটছিল। এসব কারণে পর্যটকদের টেন্ট ক্যাম্পিং সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল।

আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, আগামী সোমবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় ক্যাম্পিং চালুর বিষয়ে আলোচনা হবে। এরপর এ সপ্তাহেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট ক্যাম্পটি খুলে দেওয়া হবে। পর্যটকেরা আবার আগের মতো তাঁবুতে রাত যাপন করতে পারবেন।