খুলনার বিএনপি নেতার সাক্ষাৎকার

নেতা-কর্মীরা কীভাবে সমাবেশে আসবেন, সেই কৌশল নেওয়া হয়েছে

শফিকুল আলম
শফিকুল আলম

বিএনপি ২২ অক্টোবর খুলনায় বিভাগীয় সমাবেশ করবে। এ উপলক্ষে দলটি চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের চেয়ে বেশি জনসমাগম করার পরিকল্পনা করেছিল। চট্টগ্রামে বিক্ষিপ্ত হামলা ও বাধা দেওয়া হয়েছিল। ময়মনসিংহে হামলা ও বাধার সঙ্গে সড়কপথে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল পূর্বঘোষণা ছাড়াই। এবার খুলনায় সমাবেশের দুই দিন আগেই বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমন প্রেক্ষাপটে সমাবেশের প্রস্তুতিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে খুলনা নগর বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শফিকুল আলম ওরফে মনার সঙ্গে।

প্রশ্ন


প্রথম আলো: বিএনপির গণসমাবেশের আগের দিন ও সমাবেশের দিন বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সমাবেশে কেমন প্রভাব পড়তে পারে?

শফিকুল আলম: জনগণের মধ্যে যে পরিমাণে সাড়া দেখছি, তাতে আমরা বিশ্বাস করি, যত বাধা আসুক, পরিবহন বন্ধ করে দিক, জনস্রোতকে ঠেকাতে পারবে না। একটা রাজনৈতিক দলের মহাসমাবেশকে রাজনৈতিকভাবে ঠেকানো ছাড়া ষড়যন্ত্র করে ঠেকানো যায় না। এগুলো অতীতেও দেখা গেছে। বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, নৌযান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও লোক আসা কিন্তু ঠেকাতে পারেনি। তখনো জনতার ঢল নেমেছে। এবারও তা–ই হবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনি ষড়যন্ত্রের কথা বলছিলেন। বাস বন্ধ করে দেওয়াটা কি ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করছেন?

শফিকুল আলম: এটা সবার কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। ২১ ও ২২ তারিখে এই বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কোনো কারণ ছাড়াই, হঠাৎ। কোনো দাবিদাওয়া নেই, কিচ্ছু নেই। হঠাৎ তারা গাড়িঘোড়া বন্ধ করে দিয়েছে। এটা সমাবেশকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কী হতে পারে!

প্রশ্ন

প্রথম আলো: চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের বিভাগীয় সমাবেশে বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। খুলনাতেও এমনটা হতে পারে, বিষয়টি কি আপনাদের ভাবনাতে ছিল?

শফিকুল আলম: শুরু থেকে এটা মাথায় রেখেই আমরা কাজ করছি। আমরা প্রশাসনসহ সবাইকে বারবার অনুরোধ করেছি, সমাবেশটা খুলনায় সফলভাবে যাতে শেষ করতে পারি। সমাবেশকে ঘিরে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে বাস মালিক সমিতি; ট্রাক মালিক সমিতি; বাস শ্রমিক ইউনিয়ন; ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন; রূপসা-বাগেরহাট, সেনের বাজার-তেরখাদা—এসব রুটের সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়নকে আমরা চিঠি দিয়ে তাদের অনুরোধ করেছিলাম বাস চলাচল স্বাভাবিক রেখে আমাদের সহযোগিতা করার জন্য। কিন্তু আমরা দেখলাম, হঠাৎ সভা করে তারা বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আগের দুই সমাবেশের কথা মাথায় রেখে আমাদের কিছু কৌশল আছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: এর আগে খুলনায় বিএনপির বড় সমাবেশগুলোর আগে দলীয় নেতা-কর্মীদের পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল বলে আপনারা অভিযোগ করেছিলেন। এবারের পরিস্থিতি কী?

শফিকুল আলম: গতকাল থেকে মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ আমাদের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে। আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। আমরা মনে করছি, হয়রানি করা, নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির এই চেষ্টা তারা অব্যাহত রাখবে। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ভয়ভীতি দিচ্ছে যাতে নেতা–কর্মীরা সমাবেশে না আসেন। এগুলো সমাবেশের আগপর্যন্ত চলবে। তারপরও মনে করি, জনতার পথ রোধ করা সম্ভব হবে না।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সমাবেশে না আসার জন্য ভয়ভীতি দেখানোর কথা বলছেন। কারা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন?

শফিকুল আলম: প্রশাসনও করছে, সরকারি দল মানে আওয়ামী লীগের লোকজনও করছেন। তবে আমাদের নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত। তাঁরা সমাবেশে আসার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সমাবেশে লাখখানেক লোকের সমাগম হবে, আপনারা এমনটা বলে আসছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই পরিমাণ লোক জড়ো করা কি সম্ভব হবে?

শফিকুল আলম: বাসের পাশাপাশি জলযান বন্ধ করে দিচ্ছে। যেগুলো বন্ধ হবে না, সেগুলো আমাদের কাজে লাগবে। সেগুলো নিয়ে লোকজন হাজির হবেন। বাধা দেওয়াতে মানুষের মধ্যে আগ্রহ আরও বেড়েছে। এ কারণে লোকসমাগম আরও বেশি হবে। যেকোনো উপায়ে মানুষ আসবে। হেঁটে হলেও আসবে। প্রতিটি উপজেলা থেকে লোকজন কীভাবে আসবেন, সেটার জন্য তো কৌশল নেওয়া হয়েছে। সেই কৌশল এখনই বলাটা ঠিক হবে না।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সমাবেশের স্থান সোনালী ব্যাংক চত্বর অনেক সংকীর্ণ। ছোট জায়গায় এত বড় জমায়েত কীভাবে হবে, তা নিয়ে কর্মীদের অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। আপনারা কী ভাবছেন?

শফিকুল আলম: সোনালী ব্যাংক চত্বরটা ছোট নয়। হিসাবটা শুধু চত্বরের না। সোনালী ব্যাংক চত্বরে দাঁড়ালে শিববাড়ী মোড় পর্যন্ত দেখা যায়। আর ওই দিন শুধু সমাবেশস্থল নয়, সমগ্র খুলনা শহর লোকে লোকারণ্য হয়ে যাবে। রাস্তায় সেদিন তিল ধারণের জায়গা থাকবে না।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: খুলনার গণসমাবেশে যোগ দিচ্ছেন বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও তাঁদের অনুসারীরা। আজ এ বিষয়ে তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করবেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

শফিকুল আলম: খুলনা মহানগর ও জেলায় যে কমিটি আছে, তারা গত ৯ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৩১টি ওয়ার্ড ও তিনটি ইউনিয়নে আহ্বায়ক কমিটি করে ফেলেছে। গত ১৪ বছরে এটা ওনারা (মঞ্জু-মনি) করতে পারেননি। আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব থেকে আমরা ৯-১০ মাসে কাজটা করেছি। সমাবেশের পর দ্রুত সম্মেলনগুলো করে ফেলব। এখন কেউ যদি নিজের ভুল বুঝতে পেরে কেন্দ্রীয় হাই কমান্ডের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হাই কমান্ড নেবে। আর এখানে আসা না আসা নিয়ে আমার মন্তব্য নেই।