ক্যাম্পাস স্থানান্তরের দাবিতে এবার মূল ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। এতে অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীও সংহতি জানান। আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে
ক্যাম্পাস স্থানান্তরের দাবিতে এবার মূল ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। এতে অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীও সংহতি জানান। আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে

এবার মূল ক্যাম্পাসে চারুকলার শিক্ষার্থীদের অবস্থান

এবার মূল ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চারুকলা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, চারুকলা ক্যাম্পাসে না ফেরা পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে। আজকের মধ্যে প্রশাসন থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেলে তাঁরা কঠোর আন্দোলনে যাবেন।

সরেজমিনে দুপুর ১২টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছেন। এ সময় তাঁরা ‘দাবি মোদের একটাই, চারুকলা ক্যাম্পাসে চাই’, ‘প্রশাসনের টালবাহানা, মানি না মানব না’, ‘২৩০০ একর জানে না, চারুকলার ঠিকানা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদও এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

শিক্ষার্থীদের এই অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মামুন উর রশিদ বলেন, ‘চারুকলা অত্যন্ত গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছে। আমরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তাদের এ আন্দোলনকে শতভাগ সমর্থন জানাই। চারুকলা ক্যাম্পাসে না আসা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন থামবে না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের সঙ্গে প্রথম আলোচনাতেই তাঁরা চারুকলাকে ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। প্রশাসনও এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে। তারা শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে আছে।’

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, চারুকলা ক্যাম্পাসের প্রাণ। ক্যাম্পাসকে রঙিন করার জন্য চারুকলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। চারুকলাকে ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করতে এর চেয়ে বেশি আর কোনো কারণই প্রয়োজন হয় না। গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল আর গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট চারুকলার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে।

১৯৭০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী। ২০১০ সালের ২ আগস্ট নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। এই ইনস্টিটিউটের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০০।

শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের নভেম্বরে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ইনস্টিটিউট নগর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে তাঁরা এক দফা দাবি দেন। প্রশাসন দাবি না মানায় ওই বছরের ১৬ নভেম্বর ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে পরের বছর ২৩ জানুয়ারি থেকে ক্লাসে ফিরেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়ায় ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি তাঁরা আবারও অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। এ অবস্থায় গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে চারুকলা ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে তল্লাশি চালায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চারুকলায় সশরীর শ্রেণি কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ভবন সংস্কারের কথা বলে শিক্ষার্থীদের চারুকলা ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। তবে ৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে হামলা চালান নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে সেশনজট কমাতে গত বছরের ৩ মে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি গত মঙ্গলবার থেকে তাঁরা আবার আন্দোলন শুরু করেছেন।