গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের ওপর বগুড়া শহরের একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে ও এর আগে তাঁদের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং কয়েকটি সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মঞ্চের নেতারা।
হামলাকারীরা গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের বহনকারী একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। দুই দফা হামলায় ছয় নেতা আহত হয়েছেন।
সোমবার বিকেল পাঁচটায় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা বন্দরের জয়পুরহাট সড়কের মোড়ে অস্থায়ী মাছবাজারে সমাবেশ করেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১৪ দফা দাবিতে ঢাকা থেকে দিনাজপুর অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের বহনকারী গাড়িবহর বগুড়া শহরে ফিরছিল। সন্ধ্যা সাতটার দিকে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের মোকামতলা বাজারে প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে। এতে গণতন্ত্র মঞ্চের তিন নেতা আহত হন। রাত আটটার দিকে বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
এরপর গণতন্ত্র মঞ্চের রোডমার্চে অংশ নেওয়া নেতারা বগুড়া শহরের যে আবাসিক হোটেলে উঠেছেন, সেখানে হামলা হয় বলে পরে জোনায়েদ সাকি অভিযোগ করেন। রাত ১০টার দিকে বগুড়া শহরের সাতমাথার অদূরে আমজাদিয়া আবাসিক হোটেলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলায় তিনজন আহত হয়েছেন জানালেও তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের নাম–পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
হামলাকারীরা ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী জানিয়ে জোনায়েদ সাকি প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস থেকে লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে এসে হোটেলে হামলা চালান কয়েকজন সশস্ত্র যুবক।
এ বিষয়ে বগুড়া সদর ফাঁড়ির পরিদর্শক শাহিনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কিছু যুবক হামলার চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁদের সরিয়ে দিয়েছে।
এর আগে গাড়িবহরে হামলায় আহত তিনজন হলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সংগঠক আইয়ুব আলী, বিপ্লবী শ্রমিক সংগঠনের ঢাকা মহানগরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি এবং গাড়িচালক শরীফ উদ্দিন ওরফে শওকত।
রাত আটটার দিকে করা সংবাদ সম্মেলনে জোনায়েদ সাকি অভিযোগ করেন, ‘রোডমার্চ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনের বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ ছিল। তবে সেখানে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ পাল্টা সমাবেশ ডাকে। পরে পুলিশের অনুরোধে সংঘাত এড়াতে আমরা জয়পুরহাট সড়কের মোড়ে অস্থায়ী মাছের বাজারে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করি। ওই সময় ক্ষমতাসীন দল এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় সমাবেশস্থলের অদূরে অবস্থান নেন। তবে সমাবেশে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি এবং পুলিশের হস্তক্ষেপে হামলা করতে পারেননি তাঁরা। সমাবেশ শেষে রোডমার্চের গাড়িবহর পুলিশি পাহারায় বগুড়া শহরে ফিরছিল। পথে মোকামতলা বাজারে পৌঁছালে সেখানে আগে থেকে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল হাতে অবস্থান করা সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা গাড়িবহরে হামলা চালান।’
এ সময় গাড়ি ভাঙচুর ছাড়াও কেন্দ্রীয় তিনজন নেতাকে আহত করা হয় উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা পুলিশের চেনা। পুলিশের সামনে হামলা হলেও কেউ এখনো আটক হয়নি। এ ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
গণসংহতি আন্দোলনের এই প্রধান সমন্বয়ক বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বগুড়া শহরের সাতমাথায় গণতন্ত্র মঞ্চের পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ কর্মসূচি আছে। কিন্তু জেলা পুলিশ সাতমাথার স্থলে শহীদ খোকন পার্কে সমাবেশ করার মৌখিক অনুমতি দিয়েছে। এখন সেখানে যুবলীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে। তাঁরা নির্ধারিত সময়ে এবং নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। সংঘাত হলে দায় পুলিশ এবং সরকারের।
সংবাদ সম্মেলনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গাড়িবহরে হামলার দায় সরকার ও সরকারি দলকে নিতে হবে। চিহ্নিত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। গণতন্ত্র মঞ্চের রোডমার্চ টাঙ্গাইল অতিক্রম করার সময়ও শান্তি সমাবেশের নামে বাধা দেওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জ শহরেও সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বগুড়ায় দফায় দফায় বাধা দেওয়ার চেষ্টার পর হামলা করা হলো। চিহ্নিত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার এবং মদদদাতাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও মোকামতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের গাড়িবহরে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কথিত জনসমাবেশের নামে দেশবিরোধী কথাবার্তায় উত্তেজিত জনতা তাঁদের ওপর চড়াও হয়েছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী প্রথম আলোকে বলেন, সমাবেশ শেষে গাড়িবহর বগুড়ায় ফেরার পথে কে বা কারা মহাসড়কের পাশ থেকে দু–একটি ইটপাটকেল ছুড়েছে। এটাকে হামলা বলা যায় না। পুলিশ সুপার আরও বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ আগে মোকামতলা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিল। একই স্থানে ও একই সময়ে সেখানে সমাবেশ করার পৃথক আবেদন করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সংঘাত এড়াতে গণতন্ত্র মঞ্চকে বিকল্প স্থানে সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাঁরা মোকামতলা মাছের বাজারে সমাবেশ করেন।
এর আগে বিকেলে শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা বন্দরের জয়পুরহাট সড়কের মোড়ে অস্থায়ী মাছবাজারে করা সমাবেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকার নিজেদের জমিদার মনে করে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন পাওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সরকার নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু গুন্ডাপান্ডা তৈরি করা হয়েছে। তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে শান্তি সমাবেশের নামে আমাদের কণ্ঠরোধ করতে চায়। আমাদের গলা টিপে ধরতে চায়। তাদের জমিদারির দিন শেষ হয়ে আসছে।’
শিবগঞ্জ উপজেলা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, ভাসানী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী প্রমুখ বক্তব্য দেন।