ময়মনসিংহে বেওয়ারিশ কুকুরের জন্য ঘর বসানো হয়েছে নগরের চারটি স্থানে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে অতুল চক্রবর্তী রোডে নূরানী জর্দা কারখানার সামনে
ময়মনসিংহে বেওয়ারিশ কুকুরের জন্য ঘর বসানো হয়েছে নগরের চারটি স্থানে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে অতুল চক্রবর্তী রোডে নূরানী জর্দা কারখানার সামনে

ময়মনসিংহে বেওয়ারিশ কুকুরের জন্য ঘর

ময়মনসিংহ শহরের অনেকগুলো বেওয়ারিশ কুকুর বাচ্চা প্রসব করেছে। শীতের রাতে আশ্রয়হীন এসব কুকুরের অনেক কষ্ট। এটি উপলব্ধি করে তাদের জন্য বানানো হয়েছে ঘর। ঘরের ভেতরে রাখা হয়েছে খাবার। ঘরের সামনে লিখে রাখা, ‘অরণ্যচারী মানুষের প্রথম বন্ধু কুকুর। বন্ধুর যত্ন নিন। তাকে ভালোভাবে থাকতে দিন।’

ময়মনসিংহ নগরের অতুল চক্রবর্তী রোড, মৃত্যুঞ্জয় স্কুল এলাকা, বিদ্যাময়ী স্কুল এলাকা ও আমলাপাড়া এলাকায় কুকুরের জন্য চারটি ঘর স্থাপন করা হয়েছে। পরম্পরা নামে একটি সাহিত্য সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব ঘর বানানো হয়েছে।

উদ্যোক্তারা বলেন, রাত-বিরাতে শহরে ঘুরতে ফিরতে দেখা যায় যে কুকুরেরা এদিক–সেদিক ঘেউ ঘেউ করে। শহরের স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মন্দির, বাসাবাড়ি—সবকিছুই এখন তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ফলে কারও আঙিনায় কুকুর ঢুকতে পারে না। শীতের রাতে বাচ্চাগুলোর খুব কষ্ট হয়। এ চিন্তা করেই রাত পাহারা দেওয়া বন্ধু কুকুরের জন্য আশ্রয় স্থাপন করা হয়েছে কয়েকটি জায়গায়।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে নগরের অতুল চক্রবর্তী রোডে নূরানী জর্দা কারখানার সামনে কুকুরের জন্য বানানো ঘরের উদ্বোধন করেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত অ্যাথলেট ও সাবেক দ্রুততম মানবী ফিরোজা খাতুন। তিনি নিজেও প্রাণিপ্রেমী। কুকুরের ঘর বসানোর সময় নিজের ব্যাগ থেকে বিস্কুট বের করে কুকুরকে খেতে দেন।

ফিরোজা খাতুন বলেন, ‘গত তিন-চার বছর ধরে একদল কুকুর আমাকে দেখলেই ছুটে আসে। তাদের সাধ্যমতো খাবার দিই। এবারই কেউ কুকুরের জন্য আবাসনের চিন্তা করল। এটি খুব ভালো উদ্যোগ। কুকুরকে নিয়ে এভাবে আসলে কেউ এভাবে চিন্তা করি না।’

ময়মনসিংহ নগরের বিভিন্ন স্থানে কুকুরের এ রকম চারটি ঘর স্থাপন করা হয়েছে

এ সময় কথা হয় চা–দোকানি মঙ্গল চন্দ্র কুর্মীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে থাকা একটি কুকুরের ছয়টি বাচ্চা হয়েছে। শীতের রাতে বাচ্চাগুলো খুব কষ্ট করে। নির্মাণকাজের জন্য রাখা বালুর স্তূপে রাতে ঘুমায়। কুকুরের জন্য ঘর এ শহরে নতুন সংযোজন।

কবি আশিক আকবর বলেন, কুকুরের প্রসব সময়কে মনে করে ঘর স্থাপন করা হয়েছে। এখন কুকুরের বাচ্চা হচ্ছে। বাচ্চাগুলো যাতে বেঁচে থাকে, সে জন্য শহরের পথে পথে স্থাপন করা হয়েছে এসব আশ্রয় ঘর।

পরম্পরা নামে একটি সাহিত্য সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব ঘর বানানো হয়েছে

পরম্পরা সাহিত্য সংগঠনের সমন্বয়ক শামীম আশরাফ বলেন, ‘আমরা শীতে কুঁকড়ে যাই, নানাভাবে শীত নিবারণ করি। কিন্তু কুকুরগুলোর তো ঘর নেই। কুকুর আমাদের পরম বন্ধু, বন্ধুর জন্য কিছু করা উচিত। সেই চিন্তা থেকে ঘরগুলো করা। সুযোগ থাকলে কেউ কিছু খাবার ও পানি রেখে আসতে পারেন ঘরে অথবা নজর রাখতে পারেন আশ্রয়গুলোর।’