এক টানে জালে উঠল ৫২ লাখ টাকার ইলিশ, সাত দিনে ২১০০ মেট্রিক টন

ট্রলার থেকে ঝুড়িতে করে বিক্রির জন্য ইলিশ কক্সবাজারের ফিসারীঘাট মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে। রোববার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার উপকূলের অদূরে বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে এক টানেই ৫২ লাখ টাকার ইলিশ ধরা পড়েছে। কক্সবাজারের পেশকারপাড়া এলাকার আবদুস সাত্তারের মালিকানাধীন একটি ট্রলারে মাছগুলো ধরা পড়ে। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের বাঁকখালী নদীর ফিশারিঘাটের মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে ইলিশগুলো বিক্রি করেন জেলেরা।

ট্রলারের জেলে আবদুল গণী প্রথম আলোকে বলেন, ছয় দিন আগে একটি ট্রলার নিয়ে তাঁরা ২১ জন জেলে সাগরে নামেন। উপকূল থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে জাল ফেললে একসঙ্গে ৭ হাজার ৩০০টি ইলিশ ধরা পড়ে। মাছগুলো ফিশারিঘাটে এনে বিক্রি করে ৫২ লাখ টাকা পেয়েছেন। আজ রাতে তাঁরা আবার ইলিশ আহরণে সাগরে যাবেন বলে তিনি জানান।

এদিকে জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য বলছে, গত সাত দিনে কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২ হাজার ১০০ মেট্রিক টনের বেশি ইলিশ সরবরাহ করা হয়েছে। ফিশারিঘাটের পাইকারি বাজার ছাড়াও টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়াসহ জেলার বিভিন্ন মৎস্যকেন্দ্র থেকে দৈনিক ৩০০ মেট্রিক টন ইলিশ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। এর আগে গত বছর কক্সবাজারে ইলিশ আহরণ হয়েছিল ৩৯ হাজার ৩১৪ মেট্রিক টন। এবার ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন।

রোববার ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, বেচাবিক্রির জন্য তোলা অধিকাংশ ইলিশের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি। বেচাবিক্রিও হচ্ছে চড়া দামে। বাজারে ৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ৫৫০-৬০০ টাকায়।

শহরের নুনিয়াছটার আবদুল শুক্কুরের মালিকানাধীন আরেকটি ট্রলার ৭ হাজার ইলিশ বিক্রি করেন ৪৮ লাখ টাকায়। দুপুরে ফিশারিঘাটে দেড় হাজার ইলিশ বিক্রি করে সাড়ে ১২ লাখ টাকা পেয়েছে শহরের ৬ নম্বর ঘাট এলাকার নাসির উদ্দিনের মালিকানাধীন একটি ট্রলার। নাসির উদ্দিন বলেন, কম-বেশি সব ট্রলারে ৫০০ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত ইলিশ ধরা পড়ছে। মাছ ধরা পড়ায় খুশি জেলে শ্রমিক ও ট্রলারের মালিকেরা।

ফিশারিঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির উপদেষ্টা ও ইলিশ ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ফিশারিঘাট থেকে আজ সকাল ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ২০ মেট্রিক টনের মতো ইলিশ ঢাকা-চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হয়েছে। ইলিশের দাম আগের তুলনায় কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার বাজারে ইলিশের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজারের ইলিশের চাহিদা কমছে। এ কারণে দামও কমতে শুরু করেছে।

ইলিশ ব্যবসায়ীরা বলছেন, কক্সবাজার থেকে ট্রাকে প্রতি কেজি ইলিশ ঢাকায় পাঠাতে পরিবহন ও প্যাকেজিং খরচ যাচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এ কারণে ঢাকায় প্রতি কেজি ইলিশের বিপরীতে ১০ থেকে ২০ টাকার বেশি লাভ করা যাচ্ছে না।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ফিশারিঘাটে পাইকারি ইলিশ বিক্রির বাজারসহ টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন উপকূলে দৈনিক ৫০০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ আহরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩০০ মেট্রিক টন ইলিশ। আহরিত ইলিশের মধ্যে ৬০ ভাগের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি। ৩০ শতাংশের ওজন ১ থেকে দেড় কেজি। বাকিগুলো দেড় থেকে দুই কেজির।

কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ইলিশ ধরতে সাগরে অবস্থান করছে জেলার ছয় হাজার ট্রলার। ট্রলারগুলো ঘাটে ফিরলে ইলিশে সয়লাব হয়ে যাবে হাটবাজার।