নওগাঁর পত্নীতলা

১০ কোটি টাকার ভবন কাজে আসছে না

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমি ভবন উদ্বোধন করে চার বছর পার হলেও জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

পত্নীতলার নজিপুর পৌরসভার মাহমুদপুর এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমি ভবন। গতকাল তোলা
ছবি: প্রথম আলো

নওগাঁর পত্নীতলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমি ভবন উদ্বোধন করে চার বছর পার হলেও জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় ভবনটিতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এর ফলে ১০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি কোনো কাজে আসছে না।

নওগাঁ শিল্পকলা একাডেমি ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সাংস্কৃতিক প্রচার, প্রসার এবং তাঁদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য ১০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার মাহমুদপুর এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমি ভবনটি নির্মাণ করা হয়। গণপূর্ত বিভাগের বাস্তবায়নে ভবনটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০১৫ সালের ২০ মে।

নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল এক বছর। তবে ২০১৮ সালের জুনে কাজ শেষ হয়। ওই বছরের ১ নভেম্বর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে নওগাঁর পত্নীতলা ও দিনাজপুরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমি ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনতলা ভবনটিতে রয়েছে ৩০০ আসনবিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক অডিটরিয়াম, অফিস বিল্ডিং, ডরমিটরি, মিউজিয়াম, লাইব্রেরি, সাবস্টেশন এবং ৫০০ আসনের মুক্তমঞ্চ।

উদ্বোধনের পর চার বছর পার হলেও সাংস্কৃতিক একাডেমিটিতে কোনো জনবল কাঠামোর অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবে ভবনটি দেখভালের জন্য স্থানীয় প্রশাসন একজন অফিস সহকারী ও একজন নৈশপ্রহরী নিয়োগ দিয়েছে। প্রথম দিকে উপজেলা প্রশাসন ও পরিষদ থেকে তাঁদের মাসিক সম্মানী দেওয়া হতো। তবে দুই বছর ধরে তাঁদের কোনো সম্মানী দেওয়া হচ্ছে না। এতে তাঁদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

এদিকে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় ভবনটিতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমি ভবনটি। বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যা নামলেই সাংস্কৃতিক একাডেমি ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসে। অন্ধকারের মধ্যেই রাতে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে নৈশপ্রহরীকে।

গতকাল সোমবার পত্নীতলার নজিপুর পৌরসভার মাহমুদপুর এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমিতে গিয়ে দেখা যায়, একাডেমির মূল ফটকটিতে তালা মারা। ফটকসংলগ্ন গার্ডরুমে কেউ নেই। ডাকাডাকি করেও ভেতর থেকে কারও সাড়া পাওয়া যায়নি।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পত্নীতলার বাসিন্দা নরেন চন্দ্র পাহান বলেন, ‘উদ্বোধনের পর কিছুদিন ভবনটিতে আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করেছি। কিন্তু দেড় বছর ধরে ভবনটিতে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। বিদ্যুৎ না থাকায় সেখানে কোনো অনুষ্ঠান করতে পারছি না।  সাংস্কৃতিক একাডেমি কার্যকর করতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

এ ব্যাপারে নওগাঁ শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা তাইফুর রহমান বলেন, এই মূহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সেখানে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ভবনটির নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে বেশ কিছু বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে যায়।

জমতে জমতে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায়। সময়মতো বরাদ্দের টাকা না দিতে পারায় বিদ্যুৎ বিভাগ এক বছর আগে সেখানকার বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের সমস্যা ছাড়াও একাডেমিটিতে জনবল চেয়ে একাধিকবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।