বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্ত
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্ত

নাইক্ষ্যংছড়ি, উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে রাতভর গোলাগুলি, এপারে আতঙ্ক

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি স্থানে গতকাল রোববার রাত ৯টা থেকে থেমে থেমে গোলাগুলি, মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গোলাগুলি ও মর্টার শেলের প্রকট শব্দ শুনতে পান বাংলাদেশ সীমান্তের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী, টেকনাফ সদর, হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও সাবরাং ইউনিয়নের মানুষ।

বিজিবি ও পুলিশ সূত্র জানায়, ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সংঘর্ষ তীব্রতর হয়। ইতিমধ্যে বিজিপিকে হটিয়ে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি দখলে নেয় আরাকান আর্মি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সীমান্তের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল পৌনে ৬টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু বাজারের দক্ষিণে রাখাইন রাজ্যের তুমব্রু রাইট ক্যাম্পে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। একই সময় নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের জামছড়ি গ্রামের বিপরীতে রাখাইন রাজ্যের পাহাড়ি একটি চৌকিতে গোলাগুলি ও চারটি মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, গোলাগুলির শব্দে স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তবে আজ সকাল পর্যন্ত এপারে গুলি বা মর্টার শেল এসে পড়েনি।

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি, জলপাইতলী, পোস্টক্যাম্প, দক্ষিণ পাড়া, পশ্চিম পাড়া, পশ্চিমকুল, হ্যাডম্যান পাড়াগুলো সীমান্ত লাগোয়া। রাখাইন রাজ্যের চলমান যুদ্ধে গোলাগুলি, মর্টার শেল নিক্ষেপ হচ্ছে। তাতে এপারের লোকজন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।  

উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তেও আতঙ্ক

গতকাল রাতভর রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের আশপাশের বলিবাজার, ঝিমংখালী, কেয়ারিপ্রাং, পেরাংপুরু, নলবিলাসহ কয়েকটি গ্রামে ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত এ অবস্থা ছিল।

এতে সীমান্তে বসবাসরত লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রাখাইন যুদ্ধ কবে শেষ হবে, তার ঠিক–ঠিকানা নেই। কিন্তু শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের অর্ধলাখ মানুষ।

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা আবদুল গণি বলেন, গতকাল রাত থেকে আজ সকাল সাতটা পর্যন্ত তাঁরা গোলাগুলি শব্দ শুনতে পেয়েছেন। কড়াকড়ির কারণে জেলেরা নাফ নদীতে মাছ ধরতে নামতে পারছেন না। এতে তাঁদের ঘরে অভাব।

মিয়ানমার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি নাফ নদী অতিক্রম করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সদস্যদের তৎপর রাখা হয়েছে বলে জানান টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত অনুপ্রবেশকালে তিন দফায় ৭৯ রোহিঙ্গাকে আটক করে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।