সকাল থেকে দিনাজপুরের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। থেমে থেমে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছে। এমন বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন লাখো মুসল্লি।
আয়োজকদের দাবি, এবার দুই লক্ষাধিক মুসল্লি একসঙ্গে এ জামাতে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বৃহৎ জামাতে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মুসল্লিরা।
গোর-এ-শহীদ বড় মাঠে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এই জামাত অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও ৮টা ৩৫ মিনিটে নামাজ শুরু হয়। নামাজে ইমামতি করেন দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা শামসুল হক কাসেমি। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। ঈদগাহে মুসল্লিদের জন্য অজু, শৌচাগার ব্যবস্থাসহ মেডিকেল টিম রাখা হয়েছিল। পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে নেওয়া হয় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা।
এই জামাতে নামাজ আদায় করেছেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহম্মেদ, পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমসহ রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের মানুষ।
নামাজ শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বৃহৎ এই জামাতের উদ্যোক্তা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য এবার আশানুরূপ মুসল্লি উপস্থিত না হলেও দুই লক্ষাধিক মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। জামাতে নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে মুসল্লিদের জন্য এবারই প্রথম দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আগামী দিনেও মুসল্লিদের জন্য এই ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। সফলভাবে ঈদের জামাত সম্পন্ন হওয়ায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
দিনাজপুর রেলওয়ের স্টেশন সুপার এ কে এম জিয়াউর রহমান জানান, পঞ্চগড় থেকে দিনাজপুর এবং পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুর বিশেষ ট্রেনগুলো সকাল সোয়া ৭টায় এবং পৌনে ৮টায় দিনাজপুর স্টেশনে এসে পৌঁছায়। সকাল সাড়ে ৯টায় পুনরায় গন্তব্যে ছেড়ে যায়।
দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ–শহীদ ময়দানের আয়তন ২২ একর। ১৯৪৭ সাল থেকে এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলেও এই ঈদগাহে বৃহৎ পরিসরে জামাত শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। ২০১৫ সালে ঈদগাহে নতুন মিনার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালে নির্মাণকাজ শেষ হলে সে বছরেই ছয় লক্ষাধিক মুসল্লি ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছিলেন বলে আয়োজকেরা দাবি করেছিলেন।
গোর-এ-শহীদ ময়দানে স্থাপিত ঈদগাহ মিনারটি তৈরি করা হয়েছে মোগল স্থাপত্যরীতিতে। মেহরাবের উচ্চতা ৫৫ ফুট। ৫২ গম্বুজবিশিষ্ট ঈদগাহ মিনার। এর মধ্যে দুই প্রান্তে দুটি মিনারের উচ্চতা ৬০ ফুট। মাঝের দুটির উচ্চতা ৫০ ফুট।