প্রতিদিন সকালে ঘাসের হাট বসে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকার দোহার উপজেলার বাহ্রাঘাটের পাশে বটতলা এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ে
প্রতিদিন সকালে ঘাসের হাট বসে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকার দোহার উপজেলার বাহ্রাঘাটের পাশে বটতলা এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ে

ঘাস বিক্রি করেই চলে তাঁদের সংসার

শাজাহান মাঝি পদ্মা নদী থেকে মাছ ধরে বিক্রি করেন। তবে বছরের বেশির ভাগ সময় তিনি পদ্মার চরের ঘাস কেটে বিক্রি করে সংসার চালান। শাজাহানের মতো অনেকে পদ্মার চরের ঘাস কেটে বিক্রি করে জীবন চালান।

শাজাহান মাঝির বাড়ি ঢাকার দোহার উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামে। মঙ্গলবার সকালে দোহারের বাহ্রাঘাটের পাশে বটতলা এলাকায় ঘাসের হাটে দেখা হয় তাঁর সঙ্গে। আলাপকালে শাজাহান মাঝি বললেন, ঘাস কেটে বিক্রি করে দিনে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা রোজগার হয়। এতেই চলে তাঁর সংসার। তাঁর এক ছেলে বিদেশে থাকেন।আরেক ঘাস বিক্রেতা বিল্লাল হোসেন বলেন, ঝড়, বাদল, শীত ও গ্রীষ্ম সারা বছরই ঘাস বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়।

প্রতিদিন সকালে ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকা অথবা কোষা নৌকায় করে সবুজ ঘাস নিয়ে বাহ্রাঘাটের পাশে বটতলায় ঘাসের হাটে আসেন ঘাস বিক্রেতারা। সেই ঘাস কিনে নেন কৃষক, গৃহস্থ, গরুর খামারিসহ বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন। দোহারের মাহমুদপুর এলাকার ছোট খামারি আব্দুর রহিম বলেন, গরুকে কুঁড়া ভূষির সঙ্গে কিছু তাজা ঘাস খাওয়াতে হয়। তাই প্রতিদিন সকালেই এই ঘাটে থেকে ঘাস কিনতে আসেন। মাশকলাই, কলমি, দূর্বাঘাস, কাঁশফুল ও নেপিয়ারসহ নানা জাতের ঘাস পাওয়া যায় এখানে।

স্থানীয় কয়েকজন ঘাস বিক্রেতা জানালেন, ২০০৩ সালের দিকে পদ্মা নদীর ভাঙনে তাঁদের বসতবাড়ি বিলীন হয়। এতে তাঁরা ঠাঁই নেন পদ্মার বুকে জেগে উঠা চরে। এর পর থেকে তাঁরা পদ্মা চর থেকে ঘাস কেটে দোহারের বাহ্রাঘাট, মৈনটঘাট, ধোয়াইর বাজার, মেঘুলা রানীপুর, বিলাশপুর ঘাটসহ বিভিন্ন ঘাসের হাটে ঘাস বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। স্থানীয় কৃষক ও খামারিরা তাঁদের গরু-ছাগলের জন্য এসব তাজা ঘাস ও লতাপাতা কিনে থাকেন।

নৌকায় করে ঘাস আনা হয় ঘাসের হাটে। মঙ্গলবার সকালে ঢাকার দোহার উপজেলার বাহ্রাঘাটের পাশে বটতলা এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ে

৬০ বছর বয়সী ঘাস বিক্রেতা নুরু শেখ বলেন, প্রতিটি ঘাসের আঁটি আকার ভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়। এক আঁটি কাঁঠালপাতা ৩০ টাকা, দূর্বাঘাস ৭০-৮০ টাকা, গর্বাঘাস ৮০-১০০ টাকা, নেপিয়ার ঘাস ৩০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়। ঘাসের ক্রেতা হুকুম আলী (৬২) বলেন, তিনি প্রায়ই বাহ্রাঘাটে ঘাসের হাটে আসেন। তিন আঁটি ঘাস কিনেছেন ২১০ টাকা দিয়ে।

ফরিদপুরের চর শালেপুর থেকে বাহ্রাঘাটে ঘাস বিক্রি করতে আসা মনির হোসেন বলেন, প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘাস কেটে নৌকা ভরে রাখেন। পরের দিন ভোরেই ঘাস নিয়ে হাটে আসেন।

দোহারের অরঙ্গবাদ এলাকার ১৫ বছর বয়সী কিশোর ফরিদ জানায়, তারা গরিব মানুষ। ঘাস বিক্রির টাকায় সংসার চলে তাদের। তার লেখাপড়ার খরচও ঘাস বিক্রির টাকা থেকে আসে। তবে মাঝে মাঝে সে পদ্মায় মাছ ধরে।