শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেছেন, ‘জাতিসংঘের একটা গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের শতভাগ শিশু স্কুলে যায়। কিন্তু প্রাথমিক শেষ হওয়ার আগেই ২৫ শতাংশ ঝরে পড়ে। যদি সংবিধানে শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার বলা হয়, তাহলে শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।’
আজ বুধবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ন্যায়সংগত এবং গণতান্ত্রিক জাতীয় শিক্ষা নীতির উপাদান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ সভার আয়োজন করে ‘সেন্টার ফর হেরিটেজ স্টাডিজ’।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থা ও কনভেনশনে শিক্ষার অধিকারকে সর্বজনীন বলা হচ্ছে। তবে কতটুকু শিক্ষা একজনের মৌলিক অধিকার? ব্রিকসভুক্ত দেশের নিয়ম অনুযায়ী, ১২ বছর স্কুলে যাওয়া, এটা ন্যূনতম শিক্ষার অধিকার। রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিয়ে এই শিক্ষা দিতে হবে, না হয় রাষ্ট্র উত্তম মানবসম্পদ পাবে না। আগে এটা সমাজের দায়িত্ব ছিল, এখন বিবর্তন হয়ে রাষ্ট্রের ওপর দায়িত্ব পড়েছে।’
মেধা শব্দের সমালোচনা করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘বর্তমানে শুধু মেধার ভিত্তিতে চাকরি, মেধার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হচ্ছে। শব্দটি দ্বারা আমরা একটা শিশুকেও বিভক্ত করে ফেলছি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যদি কেউ শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ না হয়, তাহলে সে–ও মেধাবী। মেধাবী নয় বলেই তাকে শিক্ষা থেকে আলাদা করে ফেলা, এটা ন্যায়সংগত নয়।’
দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম ত্রুটি হচ্ছে শিক্ষা আনন্দদায়ক নয় বলে মন্তব্য করে সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে আমরা যে নিয়মনীতি চালু রেখেছি, সেটা হচ্ছে মেধাভিত্তিক। অন্য ক্ষেত্রে কোথাও কিন্তু মেধার কথা বলা হয়নি। কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালে প্রণীত মূলনীতিতেও কোনো মেধার কথা বলা হয়নি। সেখানে বলা আছে, পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ সূত্রে মানুষের কাজ করার অধিকার আছে। এখানে পার্থক্য শিক্ষার্থীর পছন্দ-অপছন্দে। শিক্ষার্থী সব বিষয়ে সমান পারদর্শী হবে না।’
ইউনির্ভাসিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘মেধা নির্ভর করে প্রাপ্ত সুবিধার ওপর। পারিবারিক পরিবেশের কারণে অনেক শিশু লেখাপড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এই দায়িত্ব সমাজকে নিতে হবে। কারণ, শিশুরা সমাজের সম্পদ। আমরা এখন সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করছি। কিন্তু তার আগে আমাদের জানতে হবে, একটা শিশু কীভাবে শেখে। শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা পায় সাধারণত তার মা-বাবা বা প্রাথমিক শিক্ষকদের কাছে। তাঁরা যেভাবে শেখান, শিশুরা সেভাবেই শেখে। এটাকে বলে অ্যাকটিভ স্কুল বা সক্রিয় বিদ্যালয়।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘শিক্ষার সঙ্গে আনুষঙ্গিক অনেক কিছু জড়িত। শিক্ষার মানকে গণতান্ত্রিক করতে হলে শিক্ষকদের কথা বলতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যে খাবার খায়, যে পরিবেশে থাকে, তা মানবেতর। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এ বিষয়ে কাজ করতে হবে। শিক্ষার বাজেট দ্বিগুণ করতে হবে। তাহলে বোঝা যাবে এই সরকার শিক্ষার প্রতি অনুরাগী।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মোহাম্মদ মেশকাত চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আরবি বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর হেরিটেজ স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ইফতিখারুল আলম মাসউদ। আলোচনা সভা শেষে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের দেন প্রধান আলোচক সলিমুল্লাহ খান।