নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে ১০ ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওসমান অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি (প্রা.) লিমিটেডের মালিক ওসমান গণি ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কয়েকজন ব্যবসায়ী।
আজ রোববার দুপুরে নওগাঁ শহরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়।
এ ঘটনায় চালকলের মালিক ওসমান গণি ও তাঁর ছেলে রুহুল আমিন, ওসমান অ্যাগ্রো অটোমেটিক রাইস মিলের ব্যবস্থাপক আবু নাছিম মো. মশিউর রহমানসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ১২০ জনের বিরুদ্ধে মহাদেবপুর থানায় মামলা করেছেন মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স নামের ধান আড়তের স্বত্বাধিকারী ছামিউল আলম।
তবে ব্যবসায়ীদের মারধর ও তাঁদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করার অভিযোগ অস্বীকার করে ওসমান অ্যাগ্রো অটোমেটিক রাইস মিলের ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমাদের চালকলে পাওনা টাকা নেওয়ার জন্য কয়েকজন ধান আড়তদার ও চালকলমালিক এসেছিলেন। সেদিন তাঁদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে একপর্যায়ে পাওনাদারেরা আমাদের কারখানায় ভাঙচুর চালান ও কর্মচারীদের মারধর করেন। আমাদের লোকজন কারও গায়ে হাত দেননি। এখন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো ও সংবাদ সম্মেলন করে মর্যাদাহানির চেষ্টা করছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।’
আজ রোববার ওসমান অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি (প্রা.) লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের মালিক ওসমান গণি ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলার মাতাজিহাট বাজারের ধান আড়তদার মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী ছামিউল আলম
আজ রোববার ওসমান অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি (প্রা.) লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের মালিক ওসমান গণি ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলার মাতাজিহাট বাজারের ধান আড়তদার মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী ছামিউল আলম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ওসমান গণি দুই শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষকদের কাছ থেকে বাকিতে ধান কিনে পাওনা টাকা না দিয়ে পালিয়ে যান। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও কৃষকের তাঁর কাছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। পাওনা টাকা উদ্ধার ও অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর শাস্তির দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা।
ওসমান গণি পাওনা টাকা না দেওয়ার জন্য প্রতারণামূলক বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। এই কৌশলের অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ছামিউল আলমসহ কয়েকজন পাওনাদার ব্যবসায়ীকে পাওনা টাকা নেওয়ার জন্য তাঁর মিলে ডেকে নেন। ওসমান গণির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ব্যবসায়ীরা উপজেলার আখেড়াবাড়ি এলাকায় অবস্থিত ওসমান অ্যাগ্রো অটোমেটিক রাইস মিল কারখানায় যান। এই সময় ওসমান গণির নির্দেশে তাঁর ছেলে রুহুল আমিন ও তাঁর কারখানার ব্যবস্থাপক মশিউর রহমানের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালান। এতে ধান-চাল ব্যবসায়ী আতাউর রহমান, আনোয়ার হাসেন, আবদুস সাত্তার, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, মামুনুজ্জামান জিন্নাহ, তৌহিদুল ইসলাম, ইমরান হোসাইন, নূরনবী, মোনায়েম হোসেন ও ছামিউল আলম আহত হন। এ ছাড়া পাওনা টাকা নিতে আসা ওই সব ব্যবসায়ীর ১১টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
ছামিউল আলম বলেন, ‘সেদিন আমরা ২০-২৫ জন ব্যবসায়ী পাওনা টাকা নেওয়ার জন্য ওসমান গণির চালকলে গিয়েছিলাম। পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে কৌশলে ডেকে নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। হামলাকারীরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তাঁরা ১০০ জনের বেশি ছিল। আমরা মিলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই অতর্কিত হামলা করা হয়। হামলায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই নওগাঁ সদর হাসপাতাল ও মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। আতাউর রহমান, আনোয়ার হোসেন ও আবদুস সাত্তার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এখনো চিকিৎসাধীন। তাঁদের জীবন সংকটাপন্ন।’
ছামিউল আলম আরও বলেন, ‘হামলার ঘটনার পর চার দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ মূল আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উল্টো প্রতারক চালকলের মালিক ওসমান গণি আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। ওসমান গণি ও তাঁর সহযোগীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে মেসার্স বেলাল ট্রেডার্স ধান আড়তের মালিক আহসান হাবিব, মেসার্স রিফাত ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আয়ু হেনা মোস্তফা, মেসার্স মাহবুব রাইস মিলের মালিক মোনায়েম হোসেন, মেসার্স আল-আমিন ট্রের্ডাসের স্বত্বাধিকারী তৌহিদুল ইসলাম, মেসার্স জেমি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মামুনুজ্জামান জিন্নাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন, গত বৃহস্পতিবার ওসমান অ্যাগ্রো অটোমেটিক রাইস মিলে মারামারির ঘটনায় উভয়পক্ষই পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা করেছে। পাওনাদারদের করা মামলায় হাফিজুর রহমান নামের রাইস মিলের এক কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছেন। মামলার অভিযুক্ত অন্য ব্যক্তিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।