গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে পরাজয় মেনে নিয়েছেন মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান। আজ শুক্রবার সকালে নির্বাচন-পরবর্তী এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। তবে ইভিএমে কিছু ত্রুটির কারণে অনেক মানুষ ভোট দিতে পারেননি। তারপরও আমি ফলাফল মেনে নিয়েছি।’
ঢাকার উপকণ্ঠের এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের কাছে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন আজমত উল্লা। জায়েদা খাতুন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই বাসায় ছিলেন তিনি। আজ শুক্রবার সকালে সংবাদকর্মীরা তাঁর বাসায় গেলে কিছু সময়ের জন্য কথা বলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত এই মেয়র প্রার্থী।
আজমত উল্লা খান বলেন, ‘নির্বাচনে আমার রেজাল্ট যা হয়েছে তা মেনে নিয়েছি। পাশাপাশি যিনি মেয়র হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন, তাঁকে অভিনন্দন জানাই। তবে ইভিএমে কিছু ত্রুটির কারণে অনেক মানুষ ভোট দিতে পারেননি।’
এবার সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নিজেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। পাশাপাশি তাঁর মা জায়েদা খাতুনের নামেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ঋণখেলাপির জামিনদার হওয়ায় জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়। বৈধতা পায় জায়েদা খাতুনের প্রার্থিতা। পরে আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কৃত হন জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু ভোটের লড়াইয়ে কার্যত আজমত উল্লার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাহাঙ্গীর। মায়ের পক্ষে দিনরাত প্রচার চালিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে আজমত উল্লাও নির্বাচনী প্রচারে যা বলেছেন, এর প্রায় সবই ছিল জাহাঙ্গীরকেন্দ্রিক।
জাহাঙ্গীরকে ইঙ্গিত করে আজমত উল্লা খান বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে একটি প্রোপাগান্ডা ছিল, কিন্তু আমি নির্বাচনের রায় মেনে নিয়েছি। কিন্তু এটা যদি অন্য কারও বিপক্ষে যেত, তিনি কী সেটা মেনে নিতেন? এখন তিনি বলবেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, কারণ তিনি জয়ী হয়েছেন। কিন্তু আমি একটা নীতি মেইনটেইন করে চলি, আমি একটি নৈতিকতা অনুসরণ করি। রেজাল্ট আমার বিপক্ষে গেলেই যে বলব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, এটা ঠিক না। এই কালচার থেকে জাতিকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
পরাজয়ের কারণ জানতে চেয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আজমত উল্লা খান বলেন, ‘যেহেতু আমি দলীয় প্রার্থী ছিলাম, সেহেতু দলীয় কিছু বিষয় আছে। সেগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করে এ বিষয়ে পরে মতামত দেব।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভোট গ্রহণ শেষে রাতে শহরের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্রে ভোটের ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
অপর মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট ও হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।