সুরুজ আলীর (৫০) এক একর আবাদি জমি ছিল। গত দুই বছরে তাঁর সব জমিই তিস্তা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এখন তাঁর কোনো আবাদি জমি নেই। বর্তমানে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছেন তাঁর বসতভিটার আধাপাকা বাড়িটি। যেকোনো সময় তাঁর বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গদাই এলাকায় সুরুজ আলীর বাড়ি। ওই এলাকার দুই শতাধিক পরিবারের আবাদি জমি ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এখন বসতভিটাও ভাঙনের কবলে পড়েছে।
বর্তমানে নদীতে পানি কম। এরপরও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এ সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রংপুর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, তিস্তা নদী এমনিতেই বালু পরিবহন করে বেশি। তার ওপর কাউনিয়ার গদাই এলাকাটি বালুকাময়। এখন নদীতে পানি কমে গেলেও স্রোত রয়েছে। এক বছর ধরেই সেখানে কমবেশি ভাঙছে।
কাউনিয়া উপজেলায় নতুন নতুন এলাকায় তিস্তা নদীর ভাঙন দেখা দিচ্ছে। বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও আবাদি জমি। ভাঙনকবলিত মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ঘরবাড়ি ভেঙে তাঁরা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন। এর মধ্যে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গদাই এলাকায় লোকজন।
বুধবার বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে তিস্তার ভাঙনের চিত্র দেখা যায়। এলাকায় লোকজন জানান, এক মাসের বেশি সময় ধরে এই এলাকায় নদীর ভাঙন তীব্রতর হয়েছে। নদীর পানি পাড়ে এসে ধাক্কা লাগে। একটু একটু করে তীর ভাঙছে।
আনসার আলী (৫৫) নামের এক কৃষক জানালেন, গত এক বছরে তাঁর প্রায় ৭০ শতাংশ আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন মাত্র ৫ শতাংশ জমির ওপর বসতভিটা রয়েছে। এখন এখানে-ওখানে কাজ করে সংসার চলে। তিনি বলেন, ‘হামার শোগ জমি নদীত চলি গেইছে। এলা আবাদ করার মতো কোনো জমি নাই। ঘরবাড়িও ভাঙি নিয়া যাওয়া লাগবে। কোনোটে জায়গা পাইতোছি (পাচ্ছি) না। তার ওপর পরিবারে পাঁচজন খাওয়াইয়া।’
কয়েক বছরে দুইবার ঘরবাড়ি সরানো লাগছে। এবারও টেকা যাইতোছে না। গত কয়েক দিনের নদীভাঙনে ৩৫ শতাংশ আবাদি জমি নদীতে চলি গেইছে।হাফেজ আলী, স্থানীয় কৃষক
ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে গদাই গ্রামে প্রায় ৪০০ পরিবারের বাস। নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ায় নতুন করে এই এলাকা ভাঙতে শুরু করেছে।
একই গ্রামের কৃষক হাফেজ আলী (৫৫) বলেন, ‘কয়েক বছরে দুইবার ঘরবাড়ি সরানো লাগছে। এবারও টেকা যাইতোছে না। গত কয়েক দিনের নদীভাঙনে ৩৫ শতাংশ আবাদি জমি নদীতে চলি গেইছে।’
আরেক কৃষক আবদুল মালেক (৬০) বলেন, ‘নদীর যে ভাঙন শুরু হইছে, তাতে করি মনে হয়, এই গ্রামটা এবার টিকপার নয়।’
বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনসার আলী বলেন, নদীর ভাঙনে নতুন নতুন এলাকা ভাঙছে। মানুষজন নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। ভাঙন প্রতিরোধে বালুর বস্তা ফেলে রক্ষা করার চেষ্টা চলছে। তবে কতটুকু রক্ষা হবে বলা যায় না।
পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। সেখানে ইতিমধ্যে প্রায় ৫০০ বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ওই স্থানে ১৮০ মিটারব্যাপী এলাকায় ভাঙনরোধে কাজ চলছে। বালুর বস্তাও নদীর পাড়ে ফেলা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ভাঙনরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা রয়েছে।