যথাযথ পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থার অভাবে এমনিতেই ভোলার সদর উপজেলার সদুর চর বিল এলাকার প্রায় ৬০০ একর ফসলি জমিতে কম-বেশি সারা বছরই জলাবদ্ধতা লেগে থাকে। তার ওপর ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সেখানে যোগ হয়েছে জোয়ার আর বৃষ্টির পানি। আজ বুধবার সকালে সেখানে বুক সমান পানি দেখা গেছে। তুলনামূলক স্বচ্ছ পানির নিচে ডুবে আছে আউশের বীজতলা, রোপা আউশ আর বাইন আউশের চারা। ডুবেছে বিলের চারপাশের সবজি খেত আর মাছের ঘেরও।
এমন অবস্থায় বেশ আক্ষেপ নিয়ে উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চরকালি গ্রামের কৃষক মো. মহসিন বলেন,‘সব শ্যাষ, খেতে কিছু নাই। বোরো, শাকসবজি, আউশের বীজতলা, সব পানির নিচে। মুরব্বিরা কয়, গত ৫০ বছরে এত্তো পানি খেতে ওডেনো।’
বিলের চারপাশে মানববসতি আর খামার গড়ে ওঠায় পানিনিষ্কাশনের জন্য তৈরি কালভার্টগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে পানি সহজে নামতে পারে না। যদি দ্রুত পানি না নামে তাহলে বিলের সব ফসল পচে নষ্ট হয়ে যাবে।স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ
স্থানীয় কৃষকেরা বলেন, বিলের চারপাশে মানববসতি আর খামার গড়ে ওঠায় পানিনিষ্কাশনের জন্য তৈরি কালভার্টগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে পানি সহজে নামতে পারে না। যদি দ্রুত পানি না নামে তাহলে বিলের সব ফসল পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এতে প্রায় তিন হাজার কৃষকের পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভোলার ৭ উপজেলার এমন আরও শত শত বিল রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশ বিলের পানিতে ডুবে আছে রবি ও খরিপ-১ মৌসুমের ফসল।
ভোলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয় খামারবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ভোলার ১২ হাজার ৫০৭ কৃষকের ৩ হাজার ৭৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১২৯ হেক্টর আউশের বীজতলা, ১০০ হেক্টর আউশ, গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি ১ হাজার ৭২৬ হেক্টর, পান ৩৮ হেক্টর, কলা ১৭ হেক্টর, পেঁপে ৩৬ হেক্টর, আম ২০ হেক্টর ও আখ ৭ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৪ কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। জেলা অধিদপ্তরটির উপপরিচালক মো. হাসান ওয়ারেসুল কবীর বলেন, ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
ভোলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ২২ হাজার ৩৭৭ হেক্টর। এগুলোর সবই দুর্যোগকবলিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৪ হাজার ২২০ হেক্টর ফসলি খেত পানিতে তলিয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ৩ হাজার ৭৬ হেক্টরের ফসল। এতে ২৫ হাজার ৮১৫ টন কম ফসল উৎপাদিত হতে পারে। এই ক্ষতির আর্থিক মূল্য প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।
সূত্র আরও জানায়, ভোলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ২২ হাজার ৩৭৭ হেক্টর। এগুলোর সবই দুর্যোগকবলিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৪ হাজার ২২০ হেক্টর ফসলি খেত পানিতে তলিয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ৩ হাজার ৭৬ হেক্টরের ফসল। এতে ২৫ হাজার ৮১৫ টন কম ফসল উৎপাদিত হতে পারে। এই ক্ষতির আর্থিক মূল্য প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।
কৃষকেরা অভিযোগ করে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে রবি মৌসুমের বোরো, মুগ ও শাক-সবজিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রবি ফসলের ক্ষতির তালিকায় এগুলো যুক্ত করেনি। তালিকায় উঠেছে শুধু খরিপ-১ ফসলের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র।
এ বিষয়ে ভোলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, বোরো ধানের ৯৮ ভাগ কাটা হয়েছে। আর মুগডাল বছরে তিনবার তোলা হয়। এর মধ্যে ইতিমধ্যেই ফসলটি দুইবার তোলা শেষ। এ ছাড়া অন্যান্য ফসলও তোলা শেষ হয়েছে। শীতের শাকসবজি এমনিতেই শেষ। এ কারণে বোরো মৌসুমের ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের তালিকায় এগুলো তোলা হয়নি।