কপোতাক্ষ নদের পাড়ের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পটি এখন ‘গলার কাঁটা’

যশোরের কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের সীমানা প্রাচীরের কারণে ৮০ বিঘা জমিতে প্রবেশের বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি সাগরদাঁড়ি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করতে যশোরের কেশবপুর উপজেলায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ির পলাশের কপোতাক্ষ নদ ঘিরে সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম চালাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর অংশ হয়েছে তীরজুড়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে নদের তীরে থাকা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষিজমি, ফলের বাগান ও খামারে যেতে পারছেন না লোকজন।

স্থানীয় মানুষেরা বলেন, এ সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প এখন এলাকার মানুষের ‘গলার কাঁটায়’ পরিণত হয়েছে। ভুক্তভোগী মানুষ যাতায়াতের জন্য গেট নির্মাণ করার দাবিতে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক, পাউবো তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সীমানাপ্রাচীর দিয়ে নদের তীরের উত্তর থেকে দক্ষিণ পাশ বরাবর ঘিরে দেওয়া হয়েছে। তীর রক্ষার জন্য ব্লক ফেলা হচ্ছে। নদের তীরে উঁচু হাঁটার পথ তৈরি করা হচ্ছে। শৌচাগারটি নির্মাণ শেষ হয়েছে। সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ এখনো শেষ হয়নি। ফলে তীরের পাশে যাঁদের বাড়িঘর আর জমি, তাঁরা এখন সহজে আর নদের তীরে আসতে বা যেতে পারবেন না। দীর্ঘ সীমানাপ্রাচীরে কোনো গেটও রাখা হয়নি।

আকবর আলী মোড়ল বলেন, তাঁর সীমানাপ্রাচীরের ওই পাশে ৫৪ শতক জমি রয়েছে। এর মধ্যে ২৭ শতক জমিতে ধান হয়। বাকি জমিতে আমবাগান। ওই জমির এক পাশে প্রাচীর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। ওই জমিতে যাওয়ার আর সহজ পথ নেই। অনেকটা পথ ঘুরে আসতে হবে।

দিদারুল ইসলামের ১৬ শতক জমির ওপর রয়েছে ছাগলের খামার। তিনি বলেন, খামার থেকে ছাগল বের করার কোনো উপায় নেই। আবু সাঈদ বলেন, ‘আমার ওই ঘেরার মধ্যে অল্প জমি রয়েছে। আমরা গরিব মানুষ। এই জমিতে যেতে না পারলে না খেয়ে মরতে হবে।’

সীমানাপ্রাচীরের জন্য তীরের পাশে যাঁদের বাড়িঘর আর জমি, তাঁরা এখন সহজে আর নদের তীরে আসতে বা যেতে পারবেন না

স্থানীয় মানুষেরা বলেন, সীমানাপ্রাচীরের ওপারে ৫০ জনের জমি রয়েছে। ৮০ বিঘা জমিতে এখন আর যাতায়াতের সহজ পথ নেই। জমির এক পাশ দিয়ে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। পূর্ব পাশে সাগরদাঁড়ি বাজার আর পশ্চিম পাশে সাগরদাঁড়ি আবু শারাফ সাদেক বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়। ডাকবাংলোর পেছন দিয়ে একটি পথ ছিল। সে পথই সবাই ব্যবহার করতেন। কৃষিপণ্যও আনা-নেওয়া করা যেত। সেই পথ এখন অবরুদ্ধ। আর বাজার আর বিদ্যালয়ের পেছন দিয়ে যাতায়াতের পথ নেই। এখন সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পলাশের ছোট গলি দিয়ে মানুষ যাতায়াত করছেন। তবে ওই পথ দিয়ে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন যেতে পারবে না।

ঘিরে রাখা জায়গার ভেতরে পড়েছে আবদুস সামাদের বাড়ি। তিনি বলেন, তিনি জনসাধারণের চলাচলের জন্য গেট করার দাবি জানান।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ‘তীর প্রতিরক্ষা ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প’ নামে কপোতাক্ষের তীর ঘেঁষে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি গত বছরের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা। এর মধ্যে রয়েছে নদের তীর রক্ষা, হাঁটাপথ ৫০০ মিটার, দুটি ঘাট, একটি শৌচাগার, বসার বেঞ্চ এবং বৃক্ষরোপণ ও বাতি স্থাপন। এ ছাড়া ৩৮৮ মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে।

কেশবপুরের পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার বলেন, নকশা তৈরির সময় পকেট গেট নির্মাণের কথা না ভাবাটা ভুল ছিল। তবে তাঁরা উচ্চপর্যায়ে কথা বলেছেন। অন্তত দুটি পকেট গেট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।