পর্যটনশিল্পের বিকাশ চাইলে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে আগের মতো সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের সুযোগ দিতে হবে। না হলে সৈকত ভ্রমণে আসা লাখো পর্যটক হতাশ হওয়ার পাশাপাশি পর্যটনশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তখন হোটেল–মোটেল, রেস্তোরাঁসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা খাতে বিনিয়োগকারী তিন লাখ মানুষ পথে বসবেন। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সৈকতের লাবণী পয়েন্টের একটি রেস্তোরাঁয় জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (স্কোয়াব) ও ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার টুয়াকের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন স্কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর। বক্তব্য দেন স্কোয়াব সভাপতি তোফায়েল আহমদ, টুয়াক সভাপতি আনোয়ার কামাল, সাধারণ সম্পাদক মুনিবুর রহমান প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নাফ নদীতে ডুবোচর সৃষ্টির অজুহাতে গত ২৮ সেপ্টেম্বর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখে জেলা প্রশাসন। তবে সেন্ট মার্টিন যাতায়াতের জন্য কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের ঘোষণা দেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কক্সবাজারের নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাট দিয়ে এমভি কর্ণফুলী নামে একটি জাহাজের চলাচল শুরু হয়। প্রথম দিন ৭৫০ জন পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে সক্ষম হলেও কক্সবাজারে অবস্থানরত লাখো পর্যটক হতাশ হচ্ছেন। তাঁরা টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাতায়াতের সুযোগ চাইছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এক যুগের বেশি সময় ধরে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে ১০টির বেশি জাহাজ চলাচলের মাধ্যমে দেশি–বিদেশি পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব খাতে বড় ধরনের অবদান রাখা হচ্ছে। কক্সবাজারে প্রতিবছর ২০-২৫ লাখ পর্যটক ভ্রমণে আসেন, তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশ পর্যটকের চাহিদা থাকে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ। সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার মাধ্যমে পর্যটকদের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে উৎসাহিত করা হয়। বিনোদন সেবা বাড়াতে টেকনাফ, উখিয়া ও সেন্ট মার্টিনসহ কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে গড়ে ওঠে হোটেল–মোটেল, রিসোর্ট-রেস্তোরাঁসহ কত কিছু। তাতে সৃষ্টি হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। কিন্তু নাফ নদীতে ডুবোচর সৃষ্টি এবং নাব্যতা–সংকটের অজুহাতে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। স্কোয়াব ও টুয়াক সে সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে এত দিন জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখে। কিন্তু এখন পর্যটক হয়রানি ও পর্যটনশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেখে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচলের সুযোগ দাবি করে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
স্কোয়াব সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘বিশেষ ছাড় দিয়ে একদিকে সৈকতে লাখো পর্যটক ডেকে আনা, অন্যদিকে সেন্ট মার্টিন যাতায়াতের সুযোগ বন্ধ করা—এই নীতি পর্যটক এবং পর্যটনশিল্পে বিনিয়োগকারীরা মেনে নিতে পারছেন না। কারণ, এই সিদ্ধান্তের কারণে কক্সবাজারে পর্যটনশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমরা পর্যটনশিল্পকে চাঙা রাখতে এবং পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সাবরাং পয়েন্ট থেকে জাহাজ চলাচলের সুযোগ চাই। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চাই।’