লাশ
লাশ

গৃহবধূর লাশের পাশে লেখা, ‘এ অনেক মানুষের জীবন নষ্ট করব। তাই মাইরা ফেললাম’

গাজীপুরের শ্রীপুরে বহুতল ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে আজ বুধবার বিকেলে মিম আক্তার (২২) নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিখোঁজ রয়েছেন গৃহবধূর স্বামী আল আমিন। লাশের পাশে ৫ পৃষ্ঠার একটি চিঠি পাওয়া গেছে।

মিম আক্তার সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ছোটপাড়া গ্রামের মো. ইউসুফ মিয়ার মেয়ে। তাঁর স্বামী আল আমিন শ্রীপুরের একটি স্পিনিং কারখানায় চাকরি করেন। আল আমিন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কালাই গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে। মাওনা উত্তরপাড়া গ্রামের আবদুস সামাদ নামের এক ব্যক্তির বাড়ির তৃতীয় তলার একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে তিন মাস ধরে থাকছিলেন এই দম্পতি।

মিম আক্তারের লাশের পাশে পাঁচ পৃষ্ঠার চিঠি পেয়েছে পুলিশ। ওই চিঠি আল আমিন তাঁর মায়ের কাছে লিখেছেন। চিঠিতে তিনি তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করেছেন বলে উল্লেখ আছে। তবে ওই চিঠি আল আমিনের লেখা কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

চিঠির কয়েক জায়গায় আল আমিন বিভিন্ন দোকানে বকেয়া, বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে টাকার লেনদেনের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। চিঠির অন্য অংশে লেখা, ‘নিজে একাই মইরা যাইতাম। কিন্তু এরে যদি বাঁচায়া রাইখা যাই, এ অনেক মানুষের জীবন নষ্ট করব। তাই মাইরা ফেললাম।’

চিঠির একটি অংশে লেখা, ‘মা, আমারে মাফ কইরা দিয়ো। অনেক স্বপ্ন ছিল তোমারে কোনো দিন কষ্ট দিব না। কিন্তু এমন একজন মানুষরে তুমি আমারে আইনা দিছো, যার অত্যাচার থেকে বাঁচতে এই সিদ্ধান্ত নিলাম। তিলে তিলে মরার চাইতে একবারে মরে গেলাম। সবাই আমারে মাফ কইরা দিয়ো। সে আমারে এই কয়েক মাসের মধ্যে মানসিক রোগী বানায়া ফেলছে।’

যে ফ্ল্যাট থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেই বাড়ি দেখভাল করেন মো. মোস্তাকিম নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, দুপুরে আল আমিনের এক সহকর্মী এসে জানান যে ঘরের ভেতর লাশ আছে। আল আমিন নিজে ফোন করে তাঁর কাছে এ কথা বলেছেন। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।

মিম আক্তারের স্বজন সালমা খাতুন বলেন, ছয় মাস আগে পারিবারিক সম্মতিতে তাঁদের বিয়ে হয়। মাওনা উত্তরপাড়া গ্রামের ওই বাড়িতে ভাড়া থেকে আল আমিন চাকরি করছিলেন। তাঁদের মধ্যে কী হয়েছে, তা তাঁরা জানেন না। তবে চিঠিতে হত্যার বিষয়টি স্বামী নিজেই লিখে গেছেন। তাই এ ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা চান তিনি।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মিমের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে কেউ শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত রোববার গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের সিংগারদীঘি গ্রামে মো. শিপু নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার হয়। ওই লাশের পাশেও আট পৃষ্ঠার একটি চিঠি পাওয়া যায়। সেই চিঠিতে শিপু নিজে আত্মহত্যা করেছেন বলে লিখেছিলেন।