‘বিদ্রোহী’ মান্নানের মাঠে ফেরায় ‘নির্ভার’ আ.লীগে চিন্তার ছায়া

রাগেবুল আহসান ও আবদুল মান্নান আকন্দ
রাগেবুল আহসান ও আবদুল মান্নান আকন্দ

বগুড়া-৬ (সদর) আসনে উপনির্বাচনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান আকন্দ। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করা কামরুল হাসান সিদ্দিকীর প্রার্থিতাও আপিলে বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

আজ রোববার সন্ধ্যায় উপনির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং বগুড়া জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সমর্থনসূচক স্বাক্ষরসহ ১ শতাংশ ভোটারের তালিকায় গরমিল পাওয়ার কথা জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ৮ জানুয়ারি দুজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে করা আপিলের শুনানি শেষে রোববার নির্বাচন কমিশন দুজনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা।

‘বিদ্রোহী’ মান্নানকে নিয়ে চিন্তা আ.লীগে

বিএনপির ছেড়ে দেওয়া বগুড়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান। দলের ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আলোচিত পরিবহন ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান মনোনয়ন দাখিল করেন। যাচাই–বাছাইয়ে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় অনেকটা ‘নির্ভার’ ছিল আওয়ামী লীগ। তবে রোববার তিনি প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় চিন্তিত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালের বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ায় আবদুল মান্নান আকন্দকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি ভোট পেয়ে আলোচনায় আসেন। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হন। নৌকার প্রার্থী জামানত হারান। এ ছাড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনেও আবদুল মান্নান আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের ১০ জন নেতা-কর্মী বলেন, আবদুল মান্নান পৌরসভা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে তাক লাগিয়েছেন। এবারের উপনির্বাচনেও আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীও তিনিই।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে বিপুল ভোটে জয়ী হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু তিনি শপথ নেননি। পরে ২০১৯ সালের ২৪ জুনের উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ও জেলা বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক গোলাম মো. সিরাজ প্রার্থী হন। সেই ভোটেও নৌকার প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি টি জামান নিকেতাকে হারান তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল মান্নান আকন্দের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় নৌকার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী মাঠে ছিল না। নৌকার বিজয় অনেকটা সুনিশ্চিত ছিল। মনোনয়ন ফিরে পাওয়ায় কার্যত তাঁর সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদৎ আলমের মতে, বগুড়া সদর আসনে ভোটের অঙ্কে বিএনপির পরই আওয়ামী লীগের অবস্থান। নির্বাচনে বিএনপি নেই। এখন আওয়ামী লীগকে হারানোর মতো শক্তি অন্য কোনো প্রার্থীর নেই।

আবদুল মান্নান আকন্দ বলেন, ‘আমিও আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ। আমার লড়াই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়; দল বা সরকারের বিরুদ্ধেও নয়। ব্যক্তির বিরুদ্ধে, অপশক্তির বিরুদ্ধে। সব অপশক্তির বিরুদ্ধে জনগণ রায় দেবেন ১ ফেব্রুয়ারি।’

প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো প্রার্থী মাঠে নেই বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাগেবুল আহসান। তিনি বলেন, এখানকার ভোটাররা বিএনপিকে ভোট দিয়ে বারবার সংসদে পাঠিয়েছেন। জনগণের ভোটকে অসম্মান জানিয়ে বিএনপি রাজনীতির খেলা খেলেছে। দেরিতে হলেও জনগণের ভুল ভেঙেছে। আর কোনো ফাঁদে পা দিতে চান না ভোটাররা। এবারের উপনির্বাচনে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ভোটাররা একজোট হয়ে আওয়ামী লীগের প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানাচ্ছেন। এলাকার উন্নয়ন ও দলের স্বার্থে সব বিভেদ ভুলে নেতা-কর্মীরাও আসন পুনরুদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ।

রাগেবুল আহসান আরও বলেন, আবদুল মান্নান আওয়ামী লীগের কেউ নন। তাঁকে নিয়ে আওয়ামী লীগ চিন্তিতও নয়। নৌকা শেখ হাসিনার প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক। বিভেদ ভুলে একজোট হয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। উপনির্বাচনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত।

মাঠ ছাড়েনি জাসদ ও জাপা

বগুড়া-৪ আসনটি মহাজোটের শরিক জাসদকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে বগুড়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগকে ‘ছাড়’ দেয়নি জাসদ। এখানে জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক দলের মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছেন। আজ রোববার উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি জাসদ প্রার্থী।

বগুড়া–৬ আসনে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের আরেক শরিক জাতীয় পার্টিকে (জাপা) সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এবারের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দিলেও জাপা সমর্থন না দিয়ে এখানে নুরুল ইসলাম ওমরকে প্রার্থী করেছে।

তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাগেবুল আহসান বলেন, বগুড়া সদরে জাপা ও জাসদের খুব বেশি ভোট নেই। ফলে দুই দলের প্রার্থী নিয়ে তিনি বিচলিত নয় আওয়ামী লীগ।
এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা হলেন গণফ্রন্টের আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফতে আন্দোলনের প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম, জাকের পার্টির প্রার্থী মো. ফয়সাল বিন শফিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা কমিটির সভাপতি মাছুদার রহমান।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।