অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন যশোর শহরের ফুটপাতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন। সেখানে বসে পিঠাপুলি খেতে খেতে মানুষের সঙ্গে কথা বলা, শহরটি ঘিরে তাঁর পুরোনো দিনের স্মৃতির রোমন্থন করেছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর শহরের মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি সড়কের পাশে বসে আড্ডা দেন তিনি।
খোলামেলা আলাপে যশোরকে পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তোলা, তরুণসমাজের হতাশা নিরসনে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশীয় পিঠাপুলিকে রপ্তানিমুখী পণ্যে রূপান্তর, জিআই পণ্য খেজুর গুড়সহ অনেক বিষয় আড্ডার অনুষঙ্গ হিসেবে উঠে আসে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন যশোরে আসেন। গতকাল সকালে যশোর বিমানবন্দরে নেমে বেনাপোল স্থলবন্দর পরিদর্শনে যান। রাতে যশোর শহরে ফিরে সার্কিট হাউসে রাত যাপন করেন। আজ শনিবার তিনি সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর পরিদর্শনে যাবেন। পরিদর্শন শেষে যশোরে ফিরে রাত যাপন করে আগামীকাল রোববার ঢাকা ফিরবেন তিনি।
সফরের প্রথম দিন গতকাল সন্ধ্যার পর জেলা প্রশাসনের কালেক্টরেট পার্কে হাঁটাহাঁটি করেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি সড়কের (প্যারিস রোড) ফুটপাতে গড়ে ওঠা আইডিয়া পিঠা পার্কের ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকানে যান। সেখানে বসে পিঠাপুলির স্বাদ নেন। এ সময় পিঠা তৈরির উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে তিনি খোলামেলা আলাপ করেন।
সত্তরের দশকে এম সাখাওয়াত হোসেন যশোরে বিজিবির (সাবেক বিডিআর) দায়িত্ব পালন করেন। তখনকার যশোর শহর কেমন ছিল, কোন সড়কে কী কী প্রেক্ষাগৃহ ছিল, কোথায় বড় মসজিদ-মন্দির ছিল, ঐতিহাসিক ভবন কোথায় কেমন ছিল—এসব স্মৃতির রোমন্থন করেন তিনি।
যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক বলেন, ‘বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে কলেজের শিক্ষার্থীরা পিঠাপুলি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এই পিঠা রপ্তানিমুখী একটি পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা আমাদের লক্ষ্য। ইতিমধ্যে দেশের বাইরেও যশোরে তৈরি পিঠা পাঠানো হয়েছে।’
গুরুত্বের সঙ্গে এসব কথা শোনেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই শহর অনেক পুরোনো। অনেক স্মৃতি আমার। অনেক সড়ক ও স্থাপনা আছে, যা এখনো স্মৃতি রোমন্থন করি। সময়ের সঙ্গে এই শহরের পরিবর্তন ঘটেছে।’
সুপরিকল্পিতভাবে শহরটাকে সুন্দর করতে তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উৎসুক জনতাকে এই শহরে তাঁর স্মৃতির নানা ঘটনা শোনান। এ সময় তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলতে উৎসুক জনতার ভিড় লেগে যায়।
জেলা প্রশাসনের প্রধান ফটকের সামনের এই সড়কে হাঁসের মাংস ও ছিটপিঠার অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ দোকান গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া চিতই, ধুপি, ঝুরি ও ভাজাকুলি, ফুচকা ও চটপটির ভ্রাম্যমাণ অনেক উদ্যোক্তাও এখানে আছেন। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত অবধি এই সড়কে মানুষ ভিড় জমান পিঠাপুলির স্বাদ নিতে।
বিশেষ কোনো প্রটোকল ছাড়া শহরে ঘুরে বেড়ানো এবং জনসাধারণের সঙ্গে মিশে খাবার খাওয়ার বিষয়টির প্রশংসা করেছেন সবাই। তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ও প্রশংসাসূচক লেখাও দেন অনেকে।
সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশকে যাঁরা নেতৃত্ব দেবেন, তাঁদের আমরা সব সময়ই গণমানুষের কাতারে আশা করি। গণমানুষের কাতারে না এলে গণমানুষের চাওয়া-পাওয়া কিংবা চাওয়া-পাওয়ার অমিলকেও উপলব্ধি করা যায় না। আজ মাননীয় একজন উপদেষ্টা মহোদয় যেভাবে রাস্তার পাশে বসে পিঠা খেলেন, জনতার সঙ্গে সাবলীলভাবে মিশলেন, এটি অনুকরণীয়।’