সিলেট সিটি করপোরেশনের আয়তন বাড়ার প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হলেও বর্ধিত এলাকায় দৃশ্যমান উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এ সময় নগরের পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ হলেও বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। যথাযথ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় ওই এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন সময় ভোগান্তিতে পড়ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০০২ সালের ২৮ জুলাই সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। তখন নগরের আয়তন ছিল ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ২৭টি ওয়ার্ডে সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কিছু মৌজা অন্তর্ভুক্ত করে সিটি করপোরেশন সম্প্রসারিত করা হয়। এখন ওয়ার্ড বেড়ে ৪২টি এবং আয়তন সাড়ে ৭৯ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান নগরের বাসিন্দা প্রায় ১০ লাখ।
নগরের বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডের অর্ধশতাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, জলাবদ্ধতা, সুপেয় পানির সংকট, মশার উপদ্রব, নাজুক পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, সরু গলিসহ নানা ধরনের ভোগান্তি থাকলেও সমাধানে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা স্তূপাকারে পড়ে থাকলেও তা অপসারণেরও উদ্যোগ নিই। পাশাপাশি আধুনিক নগর গড়ে তোলার কোনো পরিকল্পনাই এসব ওয়ার্ডে নেওয়া হয়নি।
নাগরিক মৈত্রী সিলেটের আহ্বায়ক সমর বিজয় শেখর প্রথম আলোকে বলেন, বর্ধিত এলাকার বাসিন্দারা নগরে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর আশা করেছিলেন তাঁদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু নগরে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দুই বছর হয়ে গেলেও বিন্দুমাত্র উন্নয়ন হয়নি। বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ড আদতে গ্রামই রয়ে গেছে। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখে এসব এলাকায় পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নকাজ করা প্রয়োজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টুকেরবাজার এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, বর্ধিত এলাকার কোথাও সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেনি সিটি করপোরেশন। পয়োনিষ্কাশনের জন্য নালা তৈরি করা এবং রাস্তাঘাট পাকাকরণের উদ্যোগও বেশির ভাগ জায়গায় নেওয়া হয়নি। অধিকাংশ রাস্তা এখনো কাঁচা। তাই যোগাযোগব্যবস্থার সুবিধা এখনো নিশ্চিত হয়নি। সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর অন্ধকারে পথ চলতে হয় তাঁদের।
বর্ধিত ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াগাঁও মদিনা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা প্রবীর দেবনাথ (৬৮) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নগরে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কোনো সুফলই গত দুই বছরে পাইনি; বরং আগের মতো জলাবদ্ধতা, কাঁচা রাস্তা, সুপেয় পানির সংকট আর মশার উপদ্রব নিয়ে চলতে হচ্ছে। যাঁরা ২১ জুন মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন, তাঁরা যেন দ্রুততার সঙ্গে ওয়ার্ডের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হন, সে প্রত্যাশা করছি।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্ধিত এলাকার মধ্যে তেমুখী এলাকায় জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হওয়ায় শনিবার সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পানি অপসারণ কার্যক্রম তদারকি করেন। এ ছাড়া বর্ধিত এলাকার ডলিয়া, নয়াবাজার, নোয়াগাঁও, মেজরটিলাসহ শতাধিক এলাকায় ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট আছে।
বর্ধিত এলাকার পাঁচজন বাসিন্দা জানান, তাঁদের এলাকা সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর অপরিকল্পিতভাবে নানা এলাকায় বহুতল ভবন নির্মিত হলেও কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়নি। পরিবেশবান্ধব নগরায়ণের স্বার্থে নতুন অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডগুলোর মাঠ ও জলাশয় যেন ভরাট না হয়, সেদিকে এখনই নজরদারি বাড়ানো উচিত বলে তাঁরা মনে করেন।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরের ৪২টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫। এর মধ্যে নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ৫২৯। নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের জন্য ৪টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করে সেসব স্থানে কার্যক্রম শুরু করেছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
সার্বিক বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন ওয়ার্ডগুলোর জন্য প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ডিপিডি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) প্রণয়ন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। ওই মন্ত্রণালয়ে এটি অনুমোদনের পর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েও অনুমোদিত হয়েছে। এখন একনেকে প্রকল্পটি পাস হওয়ার অপেক্ষায় আছে। এটি পাস হলে বর্ধিত এলাকায় দ্রুতগতিতে উন্নয়নকাজ শুরু হবে। তবে জরুরি ও প্রয়োজনীয় উন্নয়নকাজ ঠিকই হচ্ছে বলে তিনি জানান।