চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মঞ্চনাটকে অভিনয়ের সময় অসুস্থ হয়ে পড়া ১৪ শিল্পী আশঙ্কামুক্ত। গতকাল সোমবার রাতে একটি নাটকে অভিনয় করতে গিয়ে পোশাকে (কস্টিউম) মেশানো পাউডার-জাতীয় রাসায়নিক পদার্থের প্রতিক্রিয়ায় তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
অসুস্থ শিল্পীদের চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁদেরও হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। শিল্প-সংস্কৃতিবিরোধী ব্যক্তি বা চক্র এমন ঘটনা ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মিম ইফতেখার জাহান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, কস্টিউমে মেশানো পাউডার-জাতীয় রাসায়নিক শরীরের সংস্পর্শে এসে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এতে শরীরে তীব্র চুলকানির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় রাত পৌনে নয়টার দিকে ১৪ জনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিনয়শিল্পী ও শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পোশাকগুলো গ্রিনরুমের বাইরে বারান্দার একটি টেবিলের ওপর সাজানো ছিল। বাইরের কেউ সেখানে গিয়ে পোশাকে রাসায়নিক বা বিছুটি-জাতীয় উদ্ভিদের বীজ মিশিয়ে থাকতে পারেন। শিল্পীরা এখন সুস্থবোধ করলেও তাঁদের শরীরে এখনো দাগ আছে।
জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা ফারুকুর রহমান বলেন, ২০১৪ সাল থেকে একটি চক্র নানাভাবে তাঁদের উত্ত্যক্ত করে আসছে। ওই বছর শিল্পকলা একাডেমি ভবনে বাইরে থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এমনকি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সময় এমন ঘটনা ঘটেছে। শিল্পীদের নিবৃত্ত করতে নানা উসকানি দেয় চক্রটি। গতকাল রাতের ঘটনায় শিল্পী ও অভিভাবকেরা ভীষণ ভয় পেয়েছেন। ইতিমধ্যেই তাঁদের ডেকে দুই দফা আলোচনা করে ভয়ভীতি দূর করার চেষ্টা করেছেন। শিল্প ও সংস্কৃতিবিরোধী চক্র পরিকল্পিতভাবে এটি করেছে। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
অভিনয়শিল্পী করিম মোল্লা বলেন, ‘অভিভাবকেরা তো ভয় পেয়েছেনই, আমি নিজেই এখন ভয় পাচ্ছি। ডাক্তার আমাকে বলেছেন, ওই পদার্থ নাক দিয়ে ভেতরে ঢুকলে ফুসফুস আক্রান্ত হতো। সমস্যা জটিল হতো। আমাদের সামলানো মুশকিল হতো।’ নাটকের নির্দেশক খন্দকার রাকিবুল হক বলেন, কয়েক দিন আগে তাঁরা চারজন মহানন্দায় গোসল করতে গিয়েছিলেন। তখন উঠতি বয়সী কয়েকজন তাঁদের উত্ত্যক্ত করেন। যন্ত্রণা সহ্য করেও নাটক শেষ করায় তিনি শিল্পীদের ধন্যবাদ জানান। আগে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি জানান।
শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মাঠে কাজ করছেন। তদন্ত যেহেতু চলছে, আগেই কোনো মন্তব্য করা উচিত হবে না। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘পোশাকের কিছু নমুনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এখনো রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। তাই পরিষ্কারভাবে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।’
জেলা শিল্পকলা একাডেমির নির্বাহী সদস্য গোলাম ফারুক জানান, মমতাজউদদীন আহমদের লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ‘ফলাফল নিম্নচাপ’ মঞ্চস্থ করা হয় গতকাল। নাটকের মাঝামাঝি সময়ে শিল্পীদের শরীরে তীব্র চুলকানি শুরু হয়। তবু তাঁরা যন্ত্রণা সহ্য করে নাটক শেষ করেন। এরপর তীব্র চুলকানিতে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ে তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।