ব্যাংক থেকে স্কুলের টাকা তুলে গুনতে গুনতে লাপাত্তা সভাপতি

যশোর জেলার মানচিত্র
যশোর জেলার মানচিত্র

স্কুলের টাকা তুলতে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিকে নিয়ে গত সোমবার দুপুরে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সোনালী ব্যাংকের নারিকেলবাড়িয়া শাখায় গিয়েছিলেন নারিকেলবাড়িয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এমদাদ হোসেন। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যৌথ স্বাক্ষরে তিন লাখ টাকা তুলে তাঁরা ব্যবস্থাপকের কক্ষে বসে গুনছিলেন।

দুই লাখ টাকা গণনার পর সভাপতির মুঠোফোনে একটি কল আসে। এ সময় সভাপতির হাতে এক লাখ টাকার একটি বান্ডিল ছিল। তিনি মুঠোফোনে কথা বলার পাশাপাশি টাকা গুনতে গুনতে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যান। অনেক চেষ্টার পরও সেই টাকা ফেরত পাননি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। বাধ্য হয়ে টাকা উদ্ধারের জন্য সোমবার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।

টাকা নিয়ে টালবাহানা করা ওই সভাপতির নাম মো. গিয়াস উদ্দিন ওরফে হিরা (৪০)। তিনি বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের আনসার আলী মোল্যার ছেলে। গিয়াস নারিকেলবাড়িয়া কলেজের শিক্ষক ও নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক। অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক এমদাদ হোসেন নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

লিখিত অভিযোগে প্রধান শিক্ষক এমদাদ হোসেন উল্লেখ করেন, তিন মাস আগে নারিকেলবাড়িয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের নামে ‘পারফরম্যান্স বেজড গ্র্যান্টস ফর সেকেন্ডারি ইনস্টিটিউশন (পিবিজিএসআই)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। স্কুলের ব্যাংক হিসাবে ওই টাকা ছিল। কয়েক দিন আগে সেখান থেকে তিন লাখ টাকা তোলা হয়। এরপর সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রকল্পের বাকি দুই লাখ ও স্কুলের সাধারণ তহবিল থেকে এক লাখসহ তিন লাখ টাকা তোলেন তিনি ও গিয়াস উদ্দিন। যৌথ স্বাক্ষরে টাকা তোলার পর ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের কক্ষে বসে গুনছিলেন তাঁরা। দুই লাখ টাকা গোনার পর সভাপতির ফোনে একটি কল আসে। এ সময় তিনি মুঠোফোনে কথা বলার পাশাপাশি টাকা গুনতে গুনতে ব্যাংকের বাইরে চলে যান। এরপর কল করলে তিনি ব্যাংকে আসছেন বলে জানান। ১০ মিনিট পর কল করলে জানান, তিনি একটি সালিসে আছেন, টাকা নিয়ে পরে স্কুলে আসবেন।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, গিয়াস উদ্দিন স্কুলে না আসায় তাঁর মুঠোফোনে কল দেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বিকেলে স্কুলের এক কর্মচারীকে তাঁর বাড়িতে পাঠান তিনি। এ সময় গিয়াস উদ্দিন শুক্রবার টাকা দেবেন বলে জানান। তিনি ওই কর্মচারীকে এ-ও বলেন, যদি অন্য কাউকে বলা হয়, তাহলে তিনি টাকা দেবেন না, তাতে যা পারবেন করবেন। বিকেলে পুনরায় সভাপতিকে কল করে স্কুলে আসার অনুরোধ করেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু তিনি সাফ জানিয়ে দেন, শুক্রবার টাকা দেবেন। যদি অন্য কাউকে বলা হয়, তাহলে টাকা ফেরত দেবেন না।

জানতে চাইলে মো. এমদাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে স্কুলের টাকা উদ্ধারের জন্য সোমবার রাতে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। আজ বিকেলে পুলিশ নারিকেলবাড়িয়া ক্যাম্পে আমাকে ডেকেছে। সেখানে যাচ্ছি। তিন দিনেও স্কুলের টাকা উদ্ধার না হওয়ায় খুব যন্ত্রণার মধ্যে আছি।’

এ ব্যাপারে কথা বলতে মো. গিয়াস উদ্দিনের মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষকের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।