কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর ১৫৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ রেখে আন্দোলনের নামে গ্রাহকদের ভোগান্তি দেওয়া, রাষ্ট্রবিরোধী আচরণ ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করার অভিযোগে চান্দিনা থানায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা শুক্রবার মামলাটি দায়ের করেন। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
মামলা হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে শুক্রবার রাতে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হুদা জানান, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কুমিল্লা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মিল্টন ঘোষ শুক্রবার দুপুরে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর ১০০ থেকে ১৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে কুমিল্লার আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বাইমানা গ্রামের সহিদুল ইসলাম (২৬), চাঁদপুরের মতলব উপজেলার কামানকান্দি মাথাভাঙ্গা গ্রামের নূর মোহাম্মদ (২৮), চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার খন্দকিয়া গ্রামের ফয়সাল চৌধুরী (৩৭), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পবনপুর তারাবো গ্রামের তানভীর আহমেদ (৩৩), ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা সদরের মিজানুর রহমান (৩০)। তাঁরা কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে আন্দোলন করেন কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে লক্ষাধিক গ্রাহক ভোগান্তির শিকার হন। একই দিন সন্ধ্যার পর দ্বিতীয় দফা বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আন্দোলন চলাকালে চান্দিনার পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় ঘেরাও করেন স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক করে। পরে শুক্রবার দুপুরে দায়ের হওয়া মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়।
এই বিষয়ে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার প্রথমে তাঁরা (পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা) ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আমরা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে বিদ্যুৎ-সংযোগ চালু করি। কিন্তু ওই দিন সন্ধ্যার পর আবারও তাঁরা দুই ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর কার্যালয় ঘেরাও করেন। এ সময় যৌথ বাহিনী সেখানে অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করে। এ ঘটনায় জড়িত অপর ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
কুমিল্লা জেলায় মোট পল্লী বিদ্যুতের ৪টি সমিতির মাধ্যমে জেলার ১৭টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বৃহস্পতিবার সব কটি সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে আন্দোলন করেন। শুধু কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একই দিন সন্ধ্যার পর দ্বিতীয় দফায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে জেলার বাকি তিনটি সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি বলে শুক্রবার রাতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
জেলায় কর্মরত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) একীভূতকরণ এবং অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নসহ চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করছেন তাঁরা। এসব দাবি নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে বুধবার গেলে তিনি আন্দোলনকারীদের কথা না শুনে উল্টো তাঁদের কয়েকজনকে বরখাস্ত করাসহ তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ এবং আন্দোলনকারীদের নামে দেওয়া মামলা ও বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা।