‘জীবিত হোক, মরা হোক শেষবারের মতো একবার ছাওয়াডার মুখ দেখপের চাই। তোমরা হামার ছাওয়াডাক খুঁজি বের করি দেও।’ প্রশাসন কিংবা সাংবাদিক দেখলেই ডুকরে কেঁদে বলছিলেন চান্দ মিয়া। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নে তিস্তা নদীতে যাত্রীবাহী নৌকাডুবির আট দিন পরও নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনের কোনো সন্ধান মেলেনি। তাঁদের উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্বজনেরা।
গত বুধবার সন্ধ্যায় ২৬ যাত্রীসহ একটি নৌকা তিস্তায় ডুবে যায়। পরে স্থানীয় বাসিন্দা ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ১৯ যাত্রীকে জীবিত এবং এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত চারজনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাদের মধ্যে পুরাতন বজরা ঘাট এলাকার চান্দ মিয়ার ছেলে আনিছুর রহমান, আনিছুরের স্ত্রী রুপালি খাতুন এবং এই দম্পতির এক শিশুসন্তান আছে। একই পরিবারের তিন সদস্যকে (একমাত্র ছেলে, ছেলের বউ ও নাতনি) হারিয়ে তাঁদের খোঁজে তিস্তার পাড়ে রাতদিন বসে থাকছেন চান্দ মিয়া। এ ঘটনায় শামীম নামের ৮ বছর বয়সী আরেক শিশু নিখোঁজ।
স্থানীয় বাসিন্দা মিলন মিয়া জানান, আনিছুর রহমান ঢাকায় একটি গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করতেন। ঈদে বাড়িতে ঘুরতে এসে আত্মীয়ের বাসায় দাওয়াত খেতে যাওয়ার সময় নৌকা ডুবে তিনিসহ একই পরিবারের তিন সদস্য নিখোঁজ হন। একমাত্র ছেলে ও স্বজনদের হারিয়ে চান্দ মিয়া পাগলপ্রায়। সেই সঙ্গে তাঁর (চান্দ মিয়া) স্ত্রীও শয্যাশায়ী।
চান্দ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আনিছুর আমার একমাত্র ছেলে, বউমা ও আমার কলিজার ধন নাতনিকে ছাড়া আমি কীভাবে বাঁচব। আমার ফুটফুটে নাতনি দাওয়াত খেতে যাওয়ার আগেও আমায় জড়িয়ে ধরেছিল। জীবিত হোক আর মরা হোক, আমি শেষবারের মতো ছাওয়াডার (ছেলের) মুখটা দেখপের চাই। দ্যাশে তো ম্যালা প্রযুক্তি আছে। তোমরা আমার ছাওয়াডাক খুঁজে দেও।’
যে স্থানে নৌকা ডুবে যায়, সেখানে স্রোত অনেক বেশি। তাই ডুবুরি গিয়ে পানির নিচে বেশিক্ষণ অবস্থান করতে পারছেন না। আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। আমরা চেষ্টা করেই যাচ্ছি।কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা কামরুল হাসান
কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, ‘নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজতে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ও রংপুর ডুবুরি দলের সদস্যরা কাজ করছেন। আজ দুপুর পর্যন্ত নিখোঁজ ছয়জনের মধ্যে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও চারজন নিখোঁজ আছে। যে স্থানে নৌকা ডুবে যায়, সেখানে স্রোত অনেক বেশি। তাই ডুবুরি গিয়ে পানির নিচে বেশিক্ষণ অবস্থান করতে পারছেন না। আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। আমরা চেষ্টা করেই যাচ্ছি।’