খালিয়াজুরী আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার পর হামলা, প্যান্ডেল ও মঞ্চ ভাঙচুর

নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্যান্ডেলে হামলা ও মঞ্চ ভাঙচুরের পরের চিত্র। আজ বুধবার বিকেলে খালিয়াজুরী কলেজ মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে কমিটি ঘোষণার পর প্যান্ডেলে হামলা ও মঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব সাজ্জাদুল হাসানসহ কয়েকজন নেতাকে বেশ কিছুক্ষণ অবরুদ্ধ করে রাখেন। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে খালিয়াজুরী কলেজ মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

জেলা কমিটির কয়েকজন শীর্ষ নেতা অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় নেতারা তাঁদের (জেলা কমিটি) সঙ্গে কোনো রকম পরামর্শ না করেই কমিটির ঘোষণা দেওয়ায় খালিয়াজুরীতে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরই আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় মোহনগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও শুক্রবার বারহাট্টা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে সাবেক এক আমলার মনমতো পকেট কমিটি ঘোষণা করায় নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন। আমরা এই কমিটি মানি না।
মো. আবুল কালাম আজাদ, বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক, খালিয়াজুরী উপজেলা আওয়ামী লীগ

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুরে খালিয়াজুরী কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মতিয়র রহমান খান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী। প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান। উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার, কেন্দ্রীয় নেতা শফি আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব সাজ্জাদুল হাসান প্রমুখ।

বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অজিত বরণ সরকারকে সভাপতি এবং খালিয়াজুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বঞ্চিতরা ‘এই কমিটি মানি না, মানব না’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা মঞ্চ ও প্যান্ডেলের চেয়ার ভাঙচুর করেন।

এ সময় উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব সাজ্জাদুল হাসানসহ কয়েকজন নেতার দিকে ধেয়ে যান। পরে পুলিশ তাঁদের মাঠসংলগ্ন ডাকবাংলোয় নিয়ে যায়। তখন নেতা-কর্মীরা ডাকবাংলো ঘেরাও করেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে পুলিশ পাহারায় অনেকে খালিয়াজুরী ত্যাগ করেন।

খালিয়াজুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে সাবেক এক আমলার মনমতো পকেট কমিটি ঘোষণা করায় নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন। আমরা এই কমিটি মানি না।’

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব সাজ্জাদুল হাসানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি ঘোষণার পর বঞ্চিতরা কিছুটা বিশৃঙ্খলা করেছেন। তবে বড় কিছু হয়নি। আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই। যাঁদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁরাও ত্যাগী এবং পরীক্ষিত। অনেক দিন ধরেই দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’