প্রতিবছরই ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে দর্শনার্থীর ঢল নামে। পরিবার-পরিজন নিয়ে সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্যে ডুব দিতে হাজির হন শত শত মানুষ। এবারও ব্যতিক্রম হলো না। আজ মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন বিকেলে অনেক মানুষ হেঁটে বেড়িয়েছেন সৈকতের পথ ধরে। গল্প-আড্ডায় কাটিয়েছেন স্মৃতিতে টুকে রাখার মতো সময়।
চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এ সৈকত বেশ আকর্ষণীয়। সূর্যাস্ত উপভোগ করতে প্রায় প্রতিদিনই ভিড় জমে যায় সৈকতজুড়ে। জেলেদের মাছ ধরা, পাখির কলরব, শামুক-ঝিনুকের মালা কেনাবেচা—সব আয়োজনে যেন মুখর এক পরিবেশ। এখানে এসে স্পিডবোটে চড়া, ঘোড়ার ওপর সওয়ার হওয়ার দৃশ্যও চোখে পড়বে। সৈকতের পাশ দিয়ে নদীর মতো বয়ে যাওয়া আউটার রিং রোড সড়কটিও ভ্রমণপিপাসুদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।
সৈকতে এত মানুষ কেন ঢুঁ মারেন, সে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল দর্শনার্থীদের কাছে। ১৫ দর্শনার্থীর কথায় বেশ কিছু কারণ উঠে এল। তাঁরা বলেন, চট্টগ্রামে খুব বেশি পর্যটনকেন্দ্র নেই। নেই খোলা জায়গা। ভালো মানের সবুজে ঘেরা পার্কের অভাব রয়েছে। অন্যদিকে স্বাধীনতা পার্ক ও জাম্বুরি পার্কে সেই জৌলুশ নেই। জায়গাও ছোট। বিপরীতে পতেঙ্গায় খোলা জায়গার অভাব নেই। চাইলেই এক পাশে নিজের মতো করে বসে থাকা যায়। আড্ডা দেওয়া যায়। এ কারণে সমুদ্রের উত্তাল জলরাশি আর অবারিত হাওয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আড্ডায় মজে যেতে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা।
আজ বেলা তিনটার দিকে সৈকতে কথা হয় নাহিদুল আলম ও তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তারের সঙ্গে। তাঁরা দুজনই পোশাক কারখানায় কাজ করেন। নাহিদুল বলেন, তাঁদের বাসা বহদ্দারহাট এলাকায়। বাসে চড়ে তাঁরা সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করতে এসেছেন। মেয়েকে নিয়ে প্রায় প্রতিবছরই সৈকতে আসছেন। প্রতিবছর আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সৈকতে ঢুকতে কোনো ফি দিতে হয় না। নিজের মতো করে ঘোরাঘুরি করা যায়। এ কারণেই বেছে নেওয়া।
সৈকতের এক প্রান্তে কাঁকড়া ভুনা চেখে দেখছিলেন রাকিবুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন ও সৈয়দ ইশতিয়াক। কথায় কথায় তাঁরা জানান, একটি বিপণিবিতানের কাপড়ের দোকানে কাজ করেন তাঁরা। ঈদের ছুটিতে তিন বন্ধু ঘুরতে বেরিয়েছেন। প্রথমে গিয়েছিলেন ফয়’স লেকে অবস্থিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। সেখান থেকে চলে আসেন সৈকতে।
অবশ্য শুধু পতেঙ্গা সৈকত নয়, ঈদের ছুটিতে সবুজে ঘেরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। ডিসি পার্ক, ভাটিয়ারি হ্রদ, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, জাম্বুরি পার্ক, স্বাধীনতা পার্কেও দর্শনার্থীরা ঢুঁ মারেন। আজ এসব পর্যটনকেন্দ্রে শিশুদের নিয়ে ঘুরতে আসেন অভিভাবকেরা। অনেকেই এসেছিলেন বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিশু-কিশোরেরা প্রাণী দেখার আনন্দে মেতে উঠেছে। বিশেষ করে বাঘ, হরিণ, ময়ূর, বানর ও জেব্রার খাঁচার সামনে পা ফেলার জায়গা ছিল না।
অন্যদিকে আজ চট্টগ্রামের ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কেও দর্শনার্থীরা আনন্দে মেতে ওঠেন। এই পর্যটনকেন্দ্রটি যেন সবুজ সাগরের বুকে একখণ্ড দ্বীপ। দর্শনার্থীরা হ্রদের স্বচ্ছ জলে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বেজক্যাম্পের ‘ট্রি টপ অ্যাক্টিভিটি’, ‘অন গ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি, ‘টিম বিল্ডিং গেম’, ‘কায়াকিং’সহ রোমাঞ্চকর আয়োজন উপভোগ করেছেন।
কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ঈদে অনেক দর্শনার্থী সময় কাটাতে আসেন ফয়’স লেক ও ওয়াটার পার্ক সি-ওয়ার্ল্ডে। তবে গতবারের তুলনায় এবার মানুষ কিছুটা কম। ঈদ উপলক্ষে নানা আয়োজন রাখা হয়েছে, রয়েছে প্যাকেজও।