গজনী অবকাশ কেন্দ্রের জিপ লাইনিংয়ের তারে ঝুলে লেক পাড় হচ্ছেন একজন তরুণী। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায়
গজনী অবকাশ কেন্দ্রের জিপ লাইনিংয়ের তারে ঝুলে লেক পাড় হচ্ছেন একজন তরুণী। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায়

পাহাড়ের হাতছানিতে পর্যটক টানছে গজনী অবকাশকেন্দ্র

পাহাড়ি শোভামণ্ডিত একটি পুরোনো বটগাছের পূর্বদিকে উঁচু পাহাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে তিনতলাবিশিষ্ট ‘অবকাশ ভবন’। সমতল ভূমি থেকে ‘অবকাশ ভবনে’ ওঠানামার জন্য পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে আঁকাবাঁকা ‘পদ্মসিঁড়ি’। গারো পাহাড়ের মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ‘সাইট ভিউ টাওয়ার’। ওই টাওয়ারে উঠে উত্তরে তাকালে চোখে পড়বে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সবুজে ঢাকা পাহাড়।

এসব কারণে শেরপুরের গজনী অবকাশকেন্দ্র পরিণত হয়েছে পর্যটকদের আকর্ষণে। এ পর্যটনকেন্দ্রের স্লোগান হলো ‘পর্যটনের আনন্দে, তুলশীমালার সুগন্ধে’। বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলের প্রধান ভ্রমণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে এটি।

গত শুক্রবার গজনি অবকাশকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা সফরে এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ বেড়াতে ও বনভোজনে এসেছেন। তাঁরা ঘুরে ঘুরে উপভোগ করছেন এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। স্মৃতি ধরে রাখতে স্বজন, বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে তুলছেন ছবি বা সেলফি।

গজনী অবকাশ কেন্দ্রের লেকে প্যাডেল বোটে চড়ে বেড়াচ্ছেন পর্যটকেরা

চলতি শীত মৌসুমের প্রতিদিনই পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে এ পর্যটনকেন্দ্র। ঢাকা থেকে সপরিবারে গজনী অবকাশকেন্দ্রে বেড়াতে এসেছেন কানাডাপ্রবাসী মঈন উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে বেড়াতে এসে চমৎকার লাগছে। গারো পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছি।’

ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী আজওয়া নাওয়ার বলেন, ‘এই প্রথম এখানে এসেছি। খুব ভালো লাগছে। এ অবকাশ কেন্দ্র থেকে দুই কিলোমিটার দূরে সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয়রাজ্য। পাহাড় আর বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দেখে নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছি।’

ব্রিটিশ আমল থেকেই এলাকাটি পিকনিক স্পট হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৩ সালে শেরপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান মজুমদারের উদ্যোগে এ অবকাশকেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। আর এখন তো শেরপুর মানেই ‘গজনী অবকাশকেন্দ্র’। শেরপুর জেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পাদদেশে এ কেন্দ্রের অবস্থান।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এখানে। সে হিসেবেও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে এ অবকাশকেন্দ্রে নির্মিত হয়েছে ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ’।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে তিনটি নতুন রাইডার চালু করা হয়েছে। এগুলো হলো জিপ লাইনিং, ঝুলন্ত ব্রিজ ও কেব্‌ল কার। পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করতে অবকাশকেন্দ্রের লেকে প্যাডেল বোটে চড়ে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। পাহাড়ের বুকজুড়ে তৈরি করা হয়েছে সুদীর্ঘ ওয়াক ওয়ে। পায়ে হেঁটে পাহাড়ের স্পর্শ নিয়ে লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া যাবে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম জলপ্রপাত ‘আলোকের ঝরনাধারা’।

এ বিনোদনকেন্দ্রের উত্তর পাশে অবস্থিত ‘গারো মা ভিলেজ’ও (অমৃতলোক) সেজেছে নতুন করে। এখানে মাশরুম ছাতার নিচে বা পাখি বেঞ্চে বসে পাহাড়ের ঢালে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, দিগন্তজোড়া ধানখেত এবং পাহাড়ি জনপদের জীবনধারা উপভোগ করা যায়। শিশুদের বিনোদনের জন্য তৈরি করা হয়েছে শিম্পাঞ্জির ভাস্কর্য। আছে চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্ক, মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশু কর্নার।

কেব্‌ল কারে চড়ে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাচ্ছেন পর্যটকেরা

গজনী অবকাশকেন্দ্রে আসা পর্যটকদের কেনাকাটার জন্য ৮৫টি দোকান রয়েছে। এখানকার কাপড়ের দোকানের মালিক আমির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটন মৌসুমে বেচাকেনা ভালোই হয়। তবে এখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের রাতযাপনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবকাশকেন্দ্রের নিকটবর্তী স্থানে হোটেল-মোটেল স্থাপন করা হলে এটি পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠবে। সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

জেলা প্রশাসক ও অবকাশ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সভাপতি সাহেলা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য গজনী অবকাশকেন্দ্রের উন্নয়নকাজ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ পর্যটন উন্নয়ন করপোরেশনের মাধ্যমে অবকাশকেন্দ্রের অদূরে হোটেলসহ রিসোর্ট নির্মাণ করা হবে।