পাঙ্গাশিয়া বালিকা বিদ্যালয়

জরাজীর্ণ ভবনে চলে পাঠদান

তিন কক্ষের একতলা ভবনটির একাধিক স্থানের বিমের পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে গেছে।

শ্রেণিক্ষের বিমের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে গেছে। সেখানে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। সম্প্রতি পাঙ্গাশিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী মারিয়াম আক্তার। ক্লাসে তার রোল নম্বর ১। মেধাবী এই ছাত্রী বিদ্যালয়ে এসে লেখাপড়ায় মন দিয়ে পারছে না।

মারিয়াম জানায়, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে এসে সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। ছাদ ও বিমের পলেস্তারা খসে গায়ে পড়ে।

বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আক্তার বলে, ‘বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে বসে সব সময়ই নজর দিয়ে ছাদ ও বিমের দিকে। কখন যে পলেস্তারা খসে পড়ে। এই ভাবে কি লেখাপড়া হয়?’ এমন প্রশ্ন সাদিয়ার।

শুধু মারিয়াম কিংবা সাদিয়াই নয়, পাঙ্গাশিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রায় ২০০ জন ছাত্রী আতঙ্ক নিয়ে লেখাপড়া করছে। কারণ, বিদ্যালয়ের একমাত্র একাডেমিক ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা এখনো না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ছাত্রীদের পাঠদান চলছে। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক রয়েছেন ১৩ জন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালের আগে পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে নারীরা ভোট দিতে পারতেন না। মেয়েদের লেখাপড়ার বিষয় নিয়েও চিন্তিত ছিলেন অভিভাবকেরা। এই অবস্থায় এলাকার কিছু দানশীল ব্যক্তি এলাকার মেয়েদের শিক্ষায় এগিয়ে আসেন।

১৯৮৫ সালে ১ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় পাঙ্গাশিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়টি। প্রথমে একটি টিনশেড ঘরে মেয়েদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এভাবে দীর্ঘ ১০ বছর পর ১৯৯৫ সালে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ তিন কক্ষের একটি একতলা ভবন নির্মাণ করে দেয়। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে ওই ভবনেই চলছে এলাকার মেয়েদের শিক্ষা কার্যক্রম।

এদিকে দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়ায় ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তিন কক্ষের একতলা ভবনটির একাধিক স্থানের বিমের পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে গেছে। ছাদের পলেস্তারা খুলে পড়ছে। তবে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ থেকে ওই ভবন পরিদর্শন বা ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়নি।

গত সোমবার সকালে গিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিষ্ণু রানী বলেন, এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ছয়টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। এখানে শুধু ছাত্রীরাই নয়, শিক্ষকেরাও আতঙ্কে থাকেন, কখন যে পলেস্তারা খসে পড়ে।

বিষ্ণু রানী আরো বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ে আমার মেয়েও পড়ে। বিদ্যালয়ের ভবনের যে অবস্থা, তাতে অনেক অভিভাবক সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। এই অবস্থায় ছাত্রী উপস্থিতি কমে যাচ্ছে।’

মো. আলাউদ্দিন নামের এক ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, ‘অনেক দিন ধরে বিদ্যালয়ের ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তারপরও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস কার্যক্রম চলছে। ছুটি শেষে মেয়ে বাসায় ফিরে না আসা পর্যন্ত চিন্তায় থাকতে হয়।’

বিদ্যালয় ভবনের পলেস্তারা খসে পড়েছে। সম্প্রতি তোলা

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে চিঠি
দিয়েছি। মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য এখানে একটি নতুন ভবন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। টিনশেড ভবনটি মেরামতের জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বলেন, পাঙ্গাশিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ওখানে একটি নতুন ভবন প্রয়োজন। নতুন ভবন নির্মাণের ব্যাপারে দপ্তর থেকে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগকে জানানো হবে।