দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী–বাজিতপুর) আসনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৯ জন। দুই দিন ধরে এলাকায় রটে গেছে এবার নৌকা পাচ্ছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল। এই খবরে তাঁর সমর্থকেরা এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল করছেন। মিষ্টি খেয়ে, পটকা ফুটিয়ে সময় পার করছেন।
তবে ‘এবারও নৌকা পেয়ে গেছেন সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন’ এমন খবরে বেশ উজ্জীবিত দলটির আরেকাংশ। আফজাল হোসেনের সমর্থকেরা গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বাজিতপুর শহরে বিশাল আনন্দমিছিল বের করে। চলে মিষ্টি বিতরণ ও পটকা ফুটানো। এই দুজনের মনোনয়ন পাওয়ার খবর ‘ভুয়া’ দাবি করে আরেকটি পক্ষ বলছে, আসলে এখানে নৌকা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকনকে। তাঁর সমর্থকেরাও নানাভাবে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সমর্থকদের এমন কর্মকাণ্ডে সংসদীয় আসটির মানুষদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। আসলে তিনজনের মধ্যে কে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন কিংবা আদৌ তাঁদের কেউ মনোনয়ন পেয়েছেন কি না, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আগামীকাল রোববার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত কারও মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আফজাল হোসেন কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। প্রথমবার সংসদ সদস্য হওয়ার পর দলে বিভাজন দেখা দেয়। একটি পক্ষ আফজালের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে থাকে। দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হওয়ার পর দলীয় রাজনীতিতে আফজালের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন আফজালবিরোধী পক্ষটি কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। নির্বাচনে আগে পক্ষটি ‘পরিবর্তন’ ইস্যুতে এক মঞ্চে এলেও সফল হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পক্ষটি আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে পক্ষটি আবার মাঠে সরব হয়। ‘পরিবর্তন মঞ্চের’ ব্যানারে তাঁরা আফজাল হোসনকে হঠানোর দাবি জানিয়ে আসছে।
এই আসন থেকে এবার দলের কাছে ৯ জন নৌকা চান। দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া ব্যক্তিরা হলেন সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন, যুবলীগ কেন্দ্রীয় পর্ষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. আলাউল হক, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর, জেলা কৃষক লীগের সাবেক সহসভাপতি ফারুক আহমদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ রফিকুন্নবী, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম, বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জন্টু কুমার সাহা ও নিকলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইকবাল হোসেন।
তাঁদের মধ্যে সুব্রত পাল, অজয় কর, ফারুক আহমেদ ও শেখ রফিকুন্নবী এই আসনে আফজালের পরিবর্তন চেয়ে দীর্ঘদিন এক মঞ্চে রাজনীতি করছেন। আলাউল হক ও রফিকুল ইসলাম বেশ কিছুদিন পরিবর্তন মঞ্চে উঠলেও এখন তাঁরা পৃথক ভাবে রাজনীতি করছেন। জন্টু কুমার ও ইকবাল হোসেন কোনো ধারায় নেই। অজয় কর ও ইকবাল হোসেন নিকলী উপজেলার বাসিন্দা। অন্যদের বাড়ি বাজিতপুর উপজেলায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার প্রথমে সুব্রত পালের মনোনয়নপ্রাপ্তির খবর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। তখন বাজিতপুর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মিছিল হয়। একই দিন রাতে আফজাল সমর্থকেরাও বাজিতপুর বাজারে মিছিল করেন। নিকলীতে মিছিল বের করেন অজয় করের সমর্থকেরা। গতকাল অজয় করের সমর্থকেরা আর মিছিল কিংবা পটকা ফুটায়নি। তবে সুব্রত পাল ও আফজাল সমর্থকেরা মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। গতকাল দুই পক্ষই শহরে আনন্দমিছিল বের করার মাধ্যমে মহড়া দেয়।
বাজিতপুর উপজেলার হিলোচিয়া গ্রামের কবির হোসেন আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। তবে দলের কোনো নেতার বলয়ে রাজনীতি করেন না। মনোনয়ন নিয়ে তিন নেতার সমর্থকদের আনন্দ প্রকাশের ধরন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা কত বোকা আর হুজুকে বাঙালি।’
জানতে চাইলে সুব্রত পাল বলেন, ‘হয়ত মনোনয়ন আমার ভাগ্যে লেখা আছে। সেই কারণে আমার কর্মীরা নানাভাবে আনন্দ প্রকাশ করছে।’ তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রোববার পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
ফোন না ধরায় সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আফজাল হোসেন টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। একবারও পরাজিত হননি। সুতরাং বিজয়ী প্রার্থীই মনেনায়ন পাবেন—এমন ধারণা সবার। তিনি বলেন, ‘আমরা গতকাল ১০ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে আনন্দমিছিল করেছি।’ ফোন না ধরায় অজয় করের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া ‘পরিবর্তন মঞ্চের’ চার নেতার একজন জেলা কৃষক লীগের সাবেক সহসভাপতি ফারুক আহমদ। মনোনয়নপ্রাপ্তির খবরে তিন নেতার সমর্থকদের আনন্দ প্রকাশ নিয়ে তাঁর ভাষ্য, মানুষকে প্রতারিত করার কৌশল। আসল খবর পেতে হলে রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা ছাড়া বিকল্প নেই।