জামায়াতে ইসলামী হঠাৎ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করায় সে হিসাব পাল্টে গেছে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ভোট হতে যাচ্ছে খুলনার কয়রায়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৯ মে এ ধাপের অন্য উপজেলাগুলোর সঙ্গে এখানেও হবে ভোটযুদ্ধ। এরই মধ্যে কয়রা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ভোটারদের মধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে। যার বড় অংশজুড়ে রয়েছে প্রার্থী পর্যালোচনা।
এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে প্রচারণায় ছিল জামায়াত। দলটির চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। জামায়াতের প্রার্থীকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ধরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাও প্রচারণায় জোর দিয়েছিলেন। কারণ, এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীরও সমান ভোটব্যাংক রয়েছে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী হঠাৎ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করায় সে হিসাব পাল্টে গেছে।
গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অন্য কোনো দলের প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলীয় ভোটারের সঙ্গে অন্য দলের সমর্থকদের একটি বড় অংশ বিদ্রোহী প্রার্থীর দিকে ঝুঁকে যাওয়ায় বিজয় সহজ হয় তাঁর। এবারও আওয়ামী লীগের সেই দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অন্য দলের সমর্থক ভোটারদের মূল নিয়ামক হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দেবে না।
এবার চেয়ারম্যান পদে যেসব প্রার্থী গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন, তাঁরা হলেন বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম শফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মোহসীন রেজা এবং নতুন মুখ হিসেবে আইনজীবী অনাদি সানা। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে মুস্তাফিজুর রহমান দীর্ঘদিন প্রচারণা চালিয়ে ১৫ এপ্রিল থেকে দলীয় সিদ্ধান্তে প্রচারণা বন্ধ রেখেছেন। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আটজন প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫৩৬ জন। গত পাঁচটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের প্রার্থী দুবার, জাতীয় পার্টির প্রার্থী একবার, আওয়ামী লীগ একবার এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী একবার নির্বাচিত হয়েছেন। গত নির্বাচনে জামায়াত অংশ নেয়নি।
এ ছাড়া কয়রা উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটও নির্বাচনে প্রভাব ফেলে। নির্বাচন এলেই সম্প্রদায়গত ভোটের হিসাব-নিকাশও সামনে চলে আসে বরাবরই। সে হিসাবে নতুন প্রার্থী অনাদি সানা এই ভোট নিজের পক্ষে টানতে পারেন বলে মনে করছেন ভোটাররা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জি এম মোহসীন রেজার সঙ্গে এস এম শফিকুল ইসলামের। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় নেতা-কর্মীদের একটি অংশের সমর্থনের পাশাপাশি অন্য দলগুলোর বড় অংশের সমর্থন পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন শফিকুল ইসলাম। তবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শফিকুল ইসলাম বর্তমান সংসদ সদস্যের বিরোধিতা করেছেন। এতে সংসদ সদস্যের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে দলীয় অনেক নেতা-কর্মী তাঁকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন।
এসব ব্যাপারে কথা হলে উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জামায়াতের প্রার্থীর ভোট বর্জনের ঘোষণায় তেমন প্রভাব পড়বে না। সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বীর (মোহসীন রেজা) সঙ্গে এর আগেও নির্বাচন করে জিতেছি। এবারও বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মোহসীন রেজা প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেকোনো সময়ের চেয়ে এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা ঐক্যবদ্ধ। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থন নিয়ে এবারের নির্বাচনে বিজয়ী হব বলে আশা করছি।’
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৯ মে তৃতীয় ধাপে এ উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২ মে। মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাই ৫ মে। আপিল নিষ্পত্তি ৯ থেকে ১১ মে—তিন দিন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১২ মে এবং প্রতীক বরাদ্দ ১৩ মে।