সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার চিকসা গ্রামবাসীর বৈঠক। গত শনিবার রাতে
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার চিকসা গ্রামবাসীর বৈঠক। গত শনিবার রাতে

সুনামগঞ্জের গ্রামটিতে কি আসলেই গানবাজনা নিষিদ্ধ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চিকসা গ্রামে গত শনিবার রাতে একটি বৈঠক হয়। গ্রামবাসীর অংশগ্রহণে হওয়া ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এক পক্ষ বলছে, বৈঠকে গ্রামে গানবাজনা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আরেক পক্ষ বলছে গানবাজনা নয়, শুধু সাউন্ডবক্স এনে উচ্চ শব্দে গান বাজানো নিষেধ করা হয়েছিল।

চিকসা গ্রামটি তাহিরপুর উপজেলা সদরের কাছাকাছি সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের পাশে অবস্থিত। সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর যেতে সড়কের ডান পাশে। গ্রামে ৫০০টির মতো পরিবার আছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ মুসলিম ও ২০ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের।

গ্রামের ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। এ বিষয়ে গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামে কোনো বিয়েশাদির অনুষ্ঠানে দুই-তিন দিন আগে থেকে সাউন্ডবক্স এনে উচ্চ শব্দে গান বাজানো হয়। এতে বয়স্ক লোকজন, রোগী, শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হয়। মানুষজন বিষয়টিতে অতিষ্ঠ। তাই সবাই বসে সাউন্ডবক্সের ব্যবহার বন্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, গ্রামে গানবাজনা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

চিকসা গ্রামে গানবাজনা নিষিদ্ধ করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে দাবি করেছেন তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জুনাব আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামের মুরব্বিরা সাউন্ডবক্সের অতি ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়টি তাঁকে জানিয়েছেন।

সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শফিকুল ইসলাম শনিবারের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। শফিকুল ইসলাম দাবি করেন, গ্রামে গানবাজনা নিষিদ্ধ করা হয়নি, এসব প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। তিনি বলেন, গ্রামের কোনো বিয়েশাদির আয়োজন হলেই দুই-তিন আগে থেকে সাউন্ডবক্স নিয়ে এসে উচ্চ শব্দে গান বাজানো শুরু হয়। অতিষ্ঠ গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে বিষয়টি মাসখানেক আগে পুলিশকেও জানানো হয়েছে। গ্রামে ওরস, মাহফিল, গানের আয়োজন বা সনাতন ধর্মের লোকজনের অনুষ্ঠানে গান হবে, এতে কোনো বাধা নেই।

গ্রামের আরেক বাসিন্দা চিকসা গ্রামের সাবেক ইমাম মাওলানা সফি উদ্দিন বলেন, বৈঠকে গানবাজনা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত ছিল শুধু মুসলমানদের জন্য। গ্রামের হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কোনো অনুষ্ঠানে গানবাজনায় আপত্তি নেই বলেও বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়েছিল।

গ্রামের আরেক বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল হাকিমও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, দুই মাস আগে থেকে গ্রামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। শনিবার রাতে বৈঠকে গ্রামে গানবাজনা বন্ধের সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে তিনি তাঁর মত দেন। তাঁর মত ছিল গানবাজনা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পক্ষে। তিনি বৈঠকে বলেছিলেন, তাহলে গ্রামের দোকানে, বাড়িতে যেসব টেলিভিশন আছে, সেগুলোও তো বন্ধ করতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে আর কেউ কোনো কথা বলেননি। পরে গানবাজনা বন্ধের পক্ষেই সিদ্ধান্ত হয়।

তাহিরপুর উপজেলা সদরের বাসিন্দা একজন শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের এলাকায় প্রায় সব গ্রামেই বিয়েশাদি হলে আগে-পরে টানা তিন থেকে চার দিন বাড়িতে সাউন্ডবক্স ভাড়া করে এনে উচ্চ শব্দে গান বাজানো হয়। এটি চরম বিরক্তিকর। এ নিয়ে সবাই অতিষ্ঠ।’

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভীন বলেছেন, তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, চিকসা গ্রামে গানবাজনা নিষিদ্ধ করার তথ্যটি সঠিক নয়।