জাজিরা পৌরসভা

খাল ভরাট করে বাজার বসানোর উদ্যোগ

জাজিরা বাজার ব্যাংক মোড় এলাকায় ৩০০ মিটার অংশ বালু ফেলে ভরাট করেছে জাজিরা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ওই স্থানে কাঁচাবাজার বসানো হবে।

শরীয়তপুরের জাজিরা পৌরসভার উত্তর বাইকসা এলাকার খালের ৩০০ মিটার বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তোলা
ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরের জাজিরা পৌরসভা এলাকায় একটি খাল বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। খালের ৩০০ মিটার অংশ ভরাট করে সেখানে বাজার বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। খালটি ভরাট হয়ে গেলে জাজিরা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

জাজিরা পৌরসভা ও জাজিরা পৌর ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, জাজিরা পৌর এলাকার পাশ দিয়ে কীর্তিনাশা নদী প্রবাহিত হয়েছে। কীর্তিনাশা নদীর উত্তর বাইকশা এলাকায় লঞ্চঘাট থেকে জাজিরা বাজার ব্যাংক মোড় পর্যন্ত ৮০০ মিটার খাল খনন করা হয় ১৯৮০-এর দশকে। ওই খাল ব্যবহার করে খাদ্য বিভাগের খাদ্যগুদামে ও জাজিরা বাজারের ব্যবসায়ীদের মালামাল নৌপথে পরিবহন করা হতো। কয়েক বছর ধরে খালটি দখল ও ভরাট করছে স্থানীয় লোকজন। ওই ৮০০ মিটার অংশের মধ্যে তিনটি স্থানে খালের ওপর দিয়ে সড়ক নেওয়া হয়েছে। উত্তর বাইকশা এলাকায় একটি মসজিদ নির্মাণ করার সময় খালের কিছু অংশ ভরাট করা হয়েছে। এ কারণে খালের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। পৌর প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসন কখনোই খালটি উদ্ধারের চেষ্টা করেনি। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকেও কখনো খালটি পুনঃখনন করা হয়নি। সম্প্রতি খালটির জাজিরা বাজার ব্যাংক মোড় এলাকায় ৩০০ মিটার অংশ বালু ফেলে ভরাট করেছে জাজিরা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ওই স্থানে কাঁচাবাজার বসানো হবে।

জাজিরার একটি সংগঠনের এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৃষ্টি হলে জাজিরার অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি ও বন্যার পানি নেমে যাওয়ার জায়গা কম। ওই খালটি জাজিরা পৌরসভার বেশ কিছু এলাকার পানি নেমে যাওয়ার মাধ্যম ছিল। কয়েক বছর ধরে খালটি স্থানীয় লোকজন বিভিন্নভাবে দখল করে ভরাট করছিল। পৌরসভা থেকে ও উপজেলা প্রশাসন থেকে কখনো ভরাট ও দখলে বাধা দেওয়া হয়নি। অথচ খালটি রক্ষা করার দায়িত্ব ছিল ওই দুই প্রশাসনের। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের চোখের সামনে পৌর কর্তৃপক্ষ খালটি ভরাট করে ফেলল। 

উত্তর বাইকশা এলাকার এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৌর মেয়র নিজে উদ্যোগী হয়ে খালটি ভরাট করছেন। আমরা বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকার মানুষ খালটি রক্ষার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের কথার কোনো গুরুত্ব দেননি। আমরাও নানা জটিলতায় জড়ানো হতে পারে, এমন আশঙ্কায় আর প্রতিবাদ করার সাহস পাইনি।’

জানতে চাইলে জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইদ্রিস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ১৫-১৬ বছর আগে ওই খালের ১০০ মিটার ভরাট করেছিলেন আগের মেয়র। জাজিরা বাজারের কাঁচাবাজার ও দুধ বিক্রির কোনো বাজার নেই। সকালে রাস্তার ওপর ওই সব পণ্য বিক্রি করা হয়। তখন স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও পথচারীদের সমস্যা হয়। কাঁচাবাজার তৈরি করে বছরে ৫-৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে। তাই খালের ৩০০ মিটার অংশ ভরাট করে কাঁচাবাজার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর জাজিরার বিভিন্ন স্থান থেকে নালা নির্মাণ করে ওই খালের যে বাকি অংশ রয়েছে, তার মধ্যে সংযোগ দেওয়া হবে। এতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাজিরার কোন খাল ভরাট করা হচ্ছে, তা আমাদের জানা নেই। খাল ভরাট ও দখল ঠেকানোর দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। তারাও আমাদের অবহিত করেনি।’

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান সোহেল বলেন, ‘জাজিরায় কোন খাল ভরাট করে বাজার তৈরি করা হচ্ছে, এমন তথ্য পৌরসভা থেকে আমাদের জানানো হয়নি। উত্তর বাইকশা এলাকার খালটি এর আগে আমি দেখেছি। সেখানে কয়েকটি স্থান বন্ধ করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা শিগগিরই খালটি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করব। আর পৌরসভা যদি খালের অংশ ভরাট করে থাকে তা-ও বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’