অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেছেন, তারা (সরকার) আঞ্চলিকতায় বিশ্বাস করে না। দেশের প্রয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস যাঁকে প্রয়োজন মনে করেছেন, তাঁকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ নিয়েছেন।
আজ শনিবার দুপুরে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের চেক বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শারমিন মুরশিদ এসব কথা বলেন। এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
‘শহীদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ’ শীর্ষক একই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম। অনুষ্ঠান ছিল দুপুর ১২টার দিকে। অনুষ্ঠান শুরুর আগে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ১৩ জন উপদেষ্টা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে কাউকে উপদেষ্টা করা হয়নি। তিন বিভাগ থেকে কি একজনও নেই, যিনি মন্ত্রণালয় চালানোর যোগ্য। অঞ্চলবৈষম্য আমরা সমর্থন করি না।’
অনুষ্ঠান শেষে বেলা একটার দিকে দুই উপদেষ্টাকে এই প্রসঙ্গ নিয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, উত্তরবঙ্গে আন্দোলন হচ্ছে, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারে কাউকে উপদেষ্টা করা হয়নি। এ প্রশ্নের জবাবে শারমিন মুরশিদ বলেন, ‘আমরা বিভাগ দেখি না, জেলা দেখি না। আমরা শুধু দেশ দেখি। দেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা যাঁদের মনে করেছেন, এই মুহূর্তে জরুরিভাবে একত্র করা দরকার, উনি তাঁদের একত্র করেছেন। এটা কাউকে ছোট করে নয়, কাউকে বড় করে নয়। আপনারা আঞ্চলিকভাবে চিন্তা করবেন না।’
আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শুধু একটি বিভাগ থেকে ১৩ জন উপদেষ্টাকে নেওয়া হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের জন্য এটা কি বৈষম্য নয়—এ প্রশ্নের জবাবে শারমিন মুরশিদ বলেন, ‘এটা বৈষম্য নয়, আপনারা অঞ্চল দিয়ে দেখা বন্ধ করুন। বিগত রেজিমে (আওয়ামী সরকার) ফরিদপুর থেকে কী পরিমাণ লোক এসেছে, ভুলে গেছেন। আমরা সেই আঞ্চলিকতায় বিশ্বাস করি না। আপনার এই এলাকায় ঠিক ততখানি শ্রম দেব, মেধা দেব, অর্থ দেব, যেটা অন্য এলাকাতেও একইভাবে দেব।’
সর্বশেষ গত ১০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নতুন করে তিনজন বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছেন। এ নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এখন ২৪ জন। নতুন তিন উপদেষ্টার শপথের পর দিন ১১ নভেম্বর রংপুর প্রেসক্লাবে সামনে ‘উত্তরাঞ্চলকে বঞ্চিত করা হয়েছে’ অভিযোগ করে সড়ক অবরোধ করেন রংপুরের ছাত্র-জনতা। ১২ ও ১৩ নভেম্বর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ থেকে অন্তত চারজন উপদেষ্টা নিয়োগের দাবিতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।
চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তরুণ প্রজন্ম যে সাহসিকতা দেখিয়েছে ও আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করা হবে। দেশ গড়ার ক্ষেত্রে তাঁদের কাজে লাগানো হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যেক আহত ও নিহত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাজের মধ্যে ত্রুটি হবে, কথার মধ্যে ভুল হবে। আমাদের ওপর রাগ করবেন। আমাদের সমালোচনা করবেন। এমনকি তিরস্কার করবেন। কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। কারণ, আমাদের অন্তর থেকে আমরা আপনাদের পাশে আছি।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘শহীদদের তালিকা বাড়তে শুরু করেছে। যাঁরা আহত, তাঁদের অনেকের অবস্থা খারাপ। তাঁদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, তাঁরা গুলি উপেক্ষা করে সামনে দাঁড়িয়ে প্রাণ দিয়েছেন।’ শহীদ পরিবারগুলোর উদ্দেশে ফরিদা আখতার বলেন, ‘আপনাদের পাশে আমরা থাকব। যদি আমাদের গাফিলতি হয়, আপনারা আমাদের প্রশ্ন করবেন।’
আবু সাঈদের আত্মত্যাগের বিষয়ে ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমরা নারী আন্দোলন যাঁরা করি, রংপুরকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি বেগম রোকেয়ার জন্য। কিন্তু এখন আবু সাঈদ সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করে দিয়েছে সাহসের প্রতীক হিসেবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, নিহত সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান বক্তব্য দেন।
আলোচনা শেষে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত রংপুর বিভাগের ৪৪টি পরিবারের মধ্যে পাঁচ লাখ করে টাকা অনুদান দেওয়া হয়। পরে উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ ও ফরিদা আখতার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করতে রংপুরের পীরগঞ্জে যান।