ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ ওরফে বাবুকে নিয়ে হত্যার আলামত ও মুঠোফোন উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ বুধবার দুপুরে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরসংলগ্ন গাঙ্গুলি হোটেলের পেছনে একটি পুকুরে ও ঝিনাইদহ স্টেডিয়ামের পাশের আরেকটি পুকুরে তল্লাশি চালানো হলেও কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
ডিবি পুলিশ বলছে, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদের সঙ্গে শিমুল ভুইয়ার যোগাযোগ হয়েছিল মুঠোফোনে। সেই মুঠোফোন উদ্ধারের জন্য অভিযান চালানো হয়েছে। এই মুঠোফোন পাওয়া গেলে হত্যাকাণ্ডের অনেক তথ্যই বেরিয়ে আসবে। অবশ্য মুঠোফোন না পাওয়ায় আবার উদ্ধার অভিযান হবে কি না, তা বলতে পারেননি দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আজ বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে জেলা কারাগার থেকে আসামি কাজী কামাল আহমেদকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বর এলাকায় আনা হয়। সেখানে গাঙ্গুলি হোটেলের পেছনে একটি পুকুরের কাছে তাঁকে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। এ সময় পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে কামাল আহমেদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ ও ডিবি কর্মকর্তারা। এরপর মাছ ধরার জেলেদের পুকুরে নামিয়ে দেওয়া হয়, যা দেখতে চারদিকে উৎসুক জনতা ভিড় করেন।
অভিযান শুরুর ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে করে ঝিনাইদহ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে পৌঁছান। সেখান থেকে গাঙ্গুলি হোটেলের পেছনে চলা অভিযানস্থলে আসেন। কিছুক্ষণ অভিযান পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিবিপ্রধান।
হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তারের অভিযান চলমান। পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারে বর্তমানে অভিযান চলছে। ঝিনাইদহে বাবুকে নিয়ে উদ্ধার অভিযান চলছে। যে মুঠোফোনে তিনি শিমুল ভুইয়ার সঙ্গে ছবি বিনিময় ও কথোপকথন করেছিলেন, সেটি উদ্ধারের জন্য অভিযান চলছে। এই মুঠোফোন পাওয়া গেলে অনেক তথ্যই বেরিয়ে আসবে। ডিবি পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে তদন্ত করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো মানুষকে হয়রানি করব না। তবে অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএমপির সহকারী কমিশনার মাহাফুজুর রহমান, ঝিনাইদহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক আযম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মীর আবিদুর রহমান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন উদ্দিনসহ পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে ঝিনাইদহ স্টেডিয়ামের পাশের আরেকটি পুকুরে মুঠোফোন উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়। সেখানেও জাল টানা হয়। জালে কয়েকটি ছোট মাছ উঠলেও কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। কিছুক্ষণ অভিযানের পর তা স্থগিত করা হয়।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কাজী কামাল আহমেদকে ঝিনাইদহ কারাগারে আনা হয়। গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম। খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে ডিবি। এই মামলায় ১৪ জুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন কাজী কামাল আহমেদ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, ভারতের কলকাতার ফ্ল্যাটে খুন করার আগে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের ওপর চেতনানাশক প্রয়োগ করা হয়। এরপর তাঁকে বালিশচাপা দেওয়া হয়। পরে তাঁর পোশাক খুলে ছবি তোলেন খুনিরা। সেই ছবি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো হয় কাজী কামাল আহমেদের ফোনে।