একসঙ্গে ঈদের নামাজ পড়েছিল তিন বন্ধু। একে অপরের বাড়িতে দাওয়াতও খেয়েছিল তারা। দুপুরে দাওয়াত খেতে দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে নাজমুল যায় তার ফুফুর বাড়িতে। দাওয়াত খাওয়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয় তিন বন্ধু। পরে মো. নাজমুল হাওলাদার (১৫) নামের একজন মারা যায়।
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দ্বিতীয়খণ্ড ইউনিয়নের জিনারগেট এলাকায় আজ শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত নাজমুল হাওলাদার উপজেলার কাদিরপুর এলাকার সৌদিপ্রবাসী নান্দু হাওলাদারের ছেলে। নাজমুল কাদিরপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হলো নাজমুলের বন্ধু জাহিদ হোসেন (১৫) ও মো. আকরাম (১৫)।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বেলা একটার দিকে নাজমুল মোটরসাইকেল নিয়ে তার ফুফুর বাড়ি উত্তর বহেরাতলা ইউনিয়নের যাদুয়ারচর যান। নাজমুলের মোটরসাইকেলে সঙ্গী ছিল তার বন্ধু জাহিদ ও আকরাম। ফুফুর বাড়িতে দুপুরে খাবার খেয়ে মোটরসাইকেলে করে তারা নিজ গ্রাম কাদিরপুর এলাকায় ফিরছিল। নাজমুলের মোটরসাইকেলটি দ্বিতীয়খণ্ড ইউনিয়নের জিনারগেট এলাকায় এলে নিয়ন্ত্রণ হারায়। পরে সড়কের মাইলফলক পিলারের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খেয়ে মোটরসাইকেলটি খাদে পড়ে যায়। এতে গুরুতর আহত হয় নাজমুল ও তার দুই বন্ধু। পরে স্থানীয় লোকজন গুরুতর অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক নাজমুলকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত জাহিদ ও আকরামকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মিঠুন বিশ্বাস বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিনজনকে হাসপাতালে আনা হয়। নাজমুল নামের একজনকে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। অপর দুজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নিহত ওই মোটরসাইকেল আরোহী মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পাওয়ায় তার মৃত্যু হয়।
নাজমুল হাওলাদারের প্রতিবেশী মেহেদী হাসান বলেন, ‘নাজমুল, জাহিদ ও আকরাম ওরা তিনজন একসঙ্গে থাকত। আজ ঈদের নামাজও একসঙ্গে পড়েছে। দুপুরে শুনি নাজমুল দুর্ঘটনায় মারা গেছে। নাজমুলের মৃত্যু আমরা কেউ মানতে পারছি না। নাজমুলের মা তাঁর সন্তানের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে পাগলের মতো করছেন। পুরো ঈদের আনন্দটা আমাদের মাটি হয়ে গেল।’
এ ব্যাপারে শিবচর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোটরসাইকেলটি দ্রুতগতিতে চলছিল। এ ছাড়া এক মোটরসাইকেলে তিনজনই কিশোর আরোহী ছিল। তিন আরোহীর কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, নাজমুল মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিল। মোটরসাইকেলটির প্রচণ্ড গতি থাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের গাইডওয়াল ও মাইলফলকের পিলার ভেঙে ১০ থেকে ১৫ ফুট নিচে পড়ে যায়। সড়ক থেকে নিচে পড়ায় তারা তিনজনই মাথায় আঘাত পায়। হাসপাতালে আনার পর নাজমুল মারা গেছে। অপর দুজনের চিকিৎসা চলছে। তারা শঙ্কামুক্ত নয়।’