নাটোরের সিংড়া উপজেলায় খালের পানি বের হওয়ার নালা বন্ধ করে নিজেদের ইটভাটায় চলাচলের রাস্তা নির্মাণ করেছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস। এতে ৭০০ একর কৃষিজমিতে পানি আটকে থাকত। প্রায় ১৬ বছর পর আজ বুধবার সেসব রাস্তা অপসারণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শেরকোল ও পাঁচবাড়িয়া এলাকায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের খালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌসসহ তিনজন বাঁধ দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। ফলে শেরকোল, পাঁচবাড়িয়া, আগপাড়া, মাঝপাড়া, খাগোরবাড়িয়া, মাদারীগ্রাম ও নিওগির গ্রামের প্রায় ৭০০ একরের বেশি ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আসছিল। দীর্ঘদিন ধরে সহস্রাধিক কৃষকের রবি শস্য ও বোরো ধান চাষাবাদ বিঘ্নিত হচ্ছিল।
স্থানীয় কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, কৃষিজমির মধ্যে ইটভাটা গড়ে তোলায় এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। তা ছাড়া খালের মুখে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাঁধ নির্মাণে ছয় গ্রামের সহস্রাধিক কৃষকের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। দীর্ঘদিন পর হলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সেই বাঁধ অপসারণে কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশার অবসান ঘটবে।
পরিবেশবাদী সংগঠন চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চলনবিলে কৃষি ও কৃষকের ফসলি জমির পানিনিষ্কাশন ও সেচ সুবিধার জন্য অসংখ্য সরকারি খাল ও জলাভূমি রয়েছে। খাল ও জলাভূমিগুলো দখলমুক্ত হলে বিলের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। প্রশাসনের এমন সাঁড়াশি অভিযানে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন ঘটবে বলে মনে করি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়ক ও জনপদ বিভাগের খালে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে ইটভাটার মালিকেরা তাঁদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। ফলে তিন ফসলি প্রায় ৭০০ একর জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কৃষকের চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটছিল। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ইটভাটার সেই বাঁধগুলো অপসারণ করা হচ্ছে। পানি নেমে গেলেই কৃষকদের সমস্যার সমাধান হবে। কোনোভাবেই পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। প্রাকৃতিক খাল ও জলাশয়ের পানির প্রবাহ কেউ বাধাগ্রস্ত করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।