স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হত্যা

ভেড়ামারায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ক্ষত রয়ে গেছে, আতঙ্ক

ভেড়ামারায় হামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সঞ্জয় কুমার মারা যাওয়ার ঘটনায় তাঁর প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিহতের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানের চাচা মৃত বিপ্লব হোসেনের ভবনের একটি ফ্ল্যাটের মালামাল পুড়িয়ে দেওয়া হয়
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বামনপাড়ার বাসিন্দা জানারুল ইসলাম খান। ভেড়ামারা শহরে ডেকোরেটরের ব্যবসা রয়েছে তাঁর। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বলে তিনি দাবি করেন। তবে তাঁর ছেলে ইয়ামিন খান ভেড়ামার পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি। ৯ আগস্ট ভেড়ামারা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতার মৃত্যুর ঘটনা কেন্দ্র করে জানারুলের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে বাড়ির প্রতিটি কক্ষ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ইয়ামিন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হত্যার ঘটনায় বর্তমানে কারাগারে আছেন।

সরেজমিন গতকাল মঙ্গলবার সকালে বামনপাড়ায় জানারুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির নিচতলার একপাশে তাঁর ভাই সালাউদ্দীনের বাড়ি। ওই বাড়িতেও হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। ঘরের প্রতিটি কক্ষে এখনো পোড়া গন্ধ। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। আসবাব পুড়ে পড়ে আছে।

কথা হলে সালাউদ্দীনের স্ত্রী নাজনীন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, সালাউদ্দীন গাড়ির ব্যবসা করেন। তিনি কোনো রাজনীতি করেন না। হামলাকারীরা ঘরের কিছুই রাখেনি। আসবাবে আগুনে দিয়ে সব পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরো বাড়ি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ইয়ামিনের ঘরে থাকা টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, এসি, খাট—কোনো কিছুই নেই। আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। সব কালো হয়ে আছে। ইয়ামিনের বাবা জানারুল ইসলাম খান বলেন, ‘একমুঠো চালও নাই। টাকাও নাই। কী দিয়ে কী করব। ছেলেটাও জেলে। টাকার অভাবে বিদ্যুতের সংযোগ নিতে পারছি না। ঘরের কক্ষগুলোর দিকে তাকালে কান্না ছাড়া কিছুই করার নেই। বাজারে দক্ষিণ রেল গেট এলাকায় ডেকোরেশনের ব্যবসা ছিল। সেখানে হামলা চালিয়ে সব লুট করা হয়েছে। অন্তত ৮৪ লাখ টাকার মালামাল ছিল সেখানে। এখন আমি পথে বসে গেছি।’

মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে জানারুল ইসলাম বলেন, ‘খেতেই পারছি না। ঘরে আলো নাই। কী করে মামলা করব। আমি তো কোনো রাজনীতি বুঝি না। ব্যবসা করি ভাত খাইতাম। সেটাও শেষ হয়ে গেছে। এখন বাড়িতে কেউ নাই। আতঙ্কে থাকতে হয়। আবার জানি কখন, কী হয়।’

একই দিন শহরের কাছারিপাড়ায় হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়িসহ বেছে বেছে তাঁর স্বজনদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। মোস্তাফিজুরের বড় চাচা নুরুল ইসলাম ও ছোট চাচা মৃত বিপ্লব হোসেনের বাড়িতে হামলা হয়।

আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের অভিযোগ, নুরুল ইসলামের অঢেল টাকা আছে। সেই টাকার দাপটে মোস্তাফিজুর শহরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাতেন।

তবে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, সঞ্জয় কুমার হত্যা মামলায় নুরুল ইসলাম আসামি নন। ঘটনার তিনি ভেড়ামারায় ছিলেন না। তিনি কুষ্টিয়া শহরে থাকেন।

মৃত বিপ্লব হোসেনের ছেলে অর্নব মামলা আসামি। তাঁদের পাশাপাশি দুটি তিনতলা বাড়িতে তিন দফায় ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এতে বাড়ির ভাড়াটেদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। সেই ধ্বংসস্তূপ এখনো দৃশ্যমান। তাঁদের দোতলার এক ভাড়াটের প্রতিটি কক্ষে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। সেখানে সব কিছু পুড়ে ছাই। এ ছাড়া মোস্তাফিজুরের ফুফাতো ভগ্নিপতি রবিউল ইসলামে বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়। তাঁর দোতলা বাড়ির সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেদিনের তাণ্ডবের চিহ্ন এখনো রয়েছে।

ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় সাত দিনেও কেউ কোনো মামলা করেনি। মামলা হলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

২ আগস্ট রাতে ভেড়ামারা উপজেলা খাদ্যগুদাম এলাকায় পূর্ববিরোধের জেরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সঞ্জয় কুমার প্রামাণিকসহ (৩৭) তিনজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত সঞ্জয় ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ আগস্ট মারা যান। হামলার ঘটনায় সঞ্জয়ের স্ত্রী বীথি রানী দে বাদী হয়ে যুবজোট নেতা মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ভেড়ামারা থানায় মামলা করেন। মোস্তাফিজুর বর্তমানে কারাগারে আছেন। তবে সঞ্জয়ের মৃত্যুর ঘটনা কেন্দ্র করে ভেড়ামারা শহরে তাণ্ডব চালান স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।