শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের গোসলখানা থেকে এক রোগীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের নেতৃত্বে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করা নার্স, ওয়ার্ডবয়, অফিস সহায়ক, আয়া, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ ১৩ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার সকাল সাতটার দিকে হাসপাতালের তৃতীয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ডের গোসলখানায় বাবু ব্যাপারী (৪০) নামের এক রোগীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে স্বজনেরা তাঁকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করেছিলেন। ওই দিন দিবাগত রাত একটার দিকে তিনি হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে নিখোঁজ হন।
পরিবারসূত্রে জানা গেছে, বরিশালের মুলাদি উপজেলার তয়কা সেলিমপুর এলাকার আলী ব্যাপারীর ছেলে বাবু ব্যাপারী এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তিনি গ্রামে থাকতেন। ছেলে স্থানীয় একটি বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। আর মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ও সদরের পালং মডেল থানা সূত্র জানায়, বাবু ব্যাপারী অসুস্থ হয়ে পড়লে গত বুধবার তাঁকে গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে এনে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভর্তি করা হয়। তাঁকে হাসপাতালের তৃতীয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ডের ৭ নম্বর শয্যায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে ওই রোগী টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে শয্যা থেকে বের হন। এরপর আর তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাবুর সঙ্গে থাকা তাঁর মা রোকেয়া বেগম (৮০) কর্তব্যরত নার্সদের বিষয়টি অবহিত করেন। কিন্তু তাঁরা বাবুকে খোঁজার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। রোকেয়া দিশাহারা হয়ে ছেলেকে খুঁজতে গত শুক্রবার গ্রামে ফিরে যান। তখন খবর পেয়ে তার অন্য স্বজনেরা শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন। তাঁরাও বাবুর কোনো সন্ধান পাননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো সহায়তা পাননি।
গতকাল সকালে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় অবস্থিত মেডিসিন ওয়ার্ডের গোসলখানায় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে নার্সদের জানান অন্য এক রোগী। তখন বাবুর স্বজনেরা সেটিকে বাবুর লাশ বলে শনাক্ত করেন। গতকাল স্বজনেরা লাশ বাড়ি নিয়ে বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের নেতৃত্বে জরুরি সভা করা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নিখোঁজ ব্যক্তিকে খোঁজার উদ্যোগ না নেওয়ায় ও আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাকে বিষয়টি না জানানোয় মেডিসিন ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করা ছয়জন নার্স, দুজন ওয়ার্ডবয়, একজন আয়া, একজন অফিস সহায়ক ও তিনজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তাঁদের দুই কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
মারা যাওয়া বাবু ব্যাপারীর ছেলে নুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা অসুস্থ হওয়ার পর বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ ছিলেন না। তাই বৃদ্ধ দাদি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর দাদি নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের কাছে অনেক কান্নাকাটি করেছেন। কেউ বাবাকে খুঁজে বের করতে সহায়তা করেননি। একজন মানুষ হাসপাতালের বাথরুমে দুই দিন আটকে পড়ে ছিল, সেখানেই সে মারা গেল। এর কোনো দায় কি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেই? আমরা এর বিচার কোথায় চাইব?’
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু হাসপাতালের গোসলখানা থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেহেতু মনে হচ্ছে, যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের অবহেলা ছিল। তাই প্রাথমিকভাবে আমরা এ পদক্ষেপগুলো নিয়েছি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর যাঁদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’