বরিশাল বিভাগে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে কিশোরীদের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি) টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় এ কার্যক্রম চালানো হবে। ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে। আজ সোমবার বিকেলে বরিশাল নগরের বান্দরোডে একটি হোটেলের মিলনায়তনে এক সভায় এই তথ্য জানান বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী। এতে বক্তব্য দেন ইউনিসেফের বরিশাল অঞ্চলের প্রধান আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে এই টিকার সার্বিক গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন ইউনিসেফের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আহসান ইসলাম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, এবার এই বিভাগের ছয় জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭০৫ জন কিশোরী বিনা মূল্যে এই টিকা পাবে। এর মধ্যে বরগুনায় ৪৬ হাজার ৪৬৯ জন, বরিশালে ১ লাখ ৩ হাজার ৭০২ জন, বরিশাল সিটি এলাকায় ২১ হাজার ৮৯৪ জন, ভোলায় ১ লাখ ২১ হাজার ৮২০ জন, ঝালকাঠি জেলায় ৩১ হাজার ৩৩৮ জন এবং পিরোজপুর জেলায় ৫৬ হাজার ৫৬৪ জন কিশোরী এই টিকা পাবে।
‘ডিভিশনাল লেভেল মাল্টি সোশ্যাল কোলাবোরেশনাল মিটিং’ শীর্ষক এই সভা শুরু হয় বিকেল ৪টায়। সভা শেষ হয় সোয়া ৫টার দিকে। সভায় বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।
সভায় জানানো হয়, দেশে গত বছর প্রথম সরকারিভাবে বিনা মূল্যে এইচপিভি টিকা দেওয়া শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে শুধু ঢাকা বিভাগে এ কার্যক্রম চলেছিল। গত বছর এই কার্যক্রমে স্কুলের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং স্কুলের বাইরে থাকা ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীরা এ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এবারও বরিশাল বিভাগের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা ১০ থেকে ১৪ বছরের কিশোরীরা এই কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে এই টিকা নেওয়ার জন্য আওতাভুক্ত কিশোরীদের https://vaxepi.gov.bd/registration ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। তবে যাদের অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ নেই, তাদেরও বিশেষভাবে তালিকাভুক্ত করে টিকা দেওয়া হবে। এরই মধ্যে বিভাগের ছয় জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় অনেক কিশোরী টিকা নেওয়ার জন্য এই নিবন্ধন করেছে।
সভায় জানানো হয়, দেশে প্রতিবছর জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় ৫ হাজার নারী মারা যান। আর প্রতিবছর লাখে ১১ জন নারী এ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। দেশে নারীরা যত ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হচ্ছে জরায়ুমুখ ক্যানসার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) হালনাগাদ সুপারিশে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে এক ডোজ টিকাই কার্যকর বলে জানানো হয়েছে। এ ক্যানসার প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের মধ্যে ৯০ শতাংশকে টিকা, ৩৫ ও ৪৫ বছর বয়সে অন্তত দুবার স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা এবং ৯০ শতাংশকে চিকিৎসার আওতায় আনার লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে।
সভায় জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসার গবেষণাবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার বা আইএআরসির সবশেষ ২০২০ সালের গ্লোবোক্যান প্রতিবেদন অনুসারে, জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্তের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।
সভায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, অল্প বয়সে বিয়ে, বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া, ঘন ঘন গর্ভধারণ, একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানো স্বামীদের কারণেও জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে ঘন সাদা স্রাব, অতিরিক্ত রক্তস্রাব ও অনিয়মিত রক্তস্রাব।