প্রতীক পেয়ে খায়রুজ্জামান বললেন, রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ৬৫-৭০ শতাংশ ভোট পড়বে

প্রতীক বরাদ্দের পর জুমার নামাজ শেষে আনুষ্ঠানিক গণসংযোগ শুরু করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান। আজ দুপুরে হযরত শাহ মখদুম দরগা মসজিদে
ছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট পড়বে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। আজ শুক্রবার দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতীক বরাদ্দের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলর প্রার্থী ও সমর্থকেরাও ভোটারদের নিয়ে আসেন। আমি মনে করি এই নির্বাচনে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট কাস্ট হতে পারে।’

আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন। প্রথমে সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। সব শেষে প্রতীক বরাদ্দ করা হয় মেয়র প্রার্থীদের।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী হিসেবে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ পান। এরপর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুরশিদ আলম ‘হাতপাখা’, জাকের পার্টির প্রার্থী এ কে এম আনোয়ার হোসেন ‘গোলাপ ফুল’ এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন ‘লাঙ্গল’ প্রতীক পান।

প্রতীক পেয়ে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের প্রচারণা। আজ শুক্রবার দুপুরে হযরত শাহ মখদুম দরগা মসজিদে

প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীদের সমর্থকেরা মিছিল করেন। এ ছাড়া সারা শহরে পোস্টার ও ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো শুরু হয়। প্রতীক বরাদ্দের আগেই অবশ্য সকালে নগরের কোথাও কোথাও নৌকার প্রার্থীর পোস্টার দেখা যায়।

প্রতীক পাওয়ার পর এ এইচ এম খায়রুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী একটি দল। নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিকাশ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন। নির্বাচন এলেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অত্যন্ত আনন্দিত ও খুশি হয়। সারা দেশের মানুষকে নিয়ে একটি আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আজকে নির্বাচনে প্রতীক নিলাম, এটার মাধ্যমে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হবে। আমি খুবই আশাবাদী এই নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করব ইনশা আল্লাহ।’

পরে খায়রুজ্জামান নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নগরীর সিএন্ডবি মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর নগরের কাদিরগঞ্জে তাঁর বাবা জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও মা জাহানারা জামানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি।

প্রতীক পাওয়ার পর ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুরশিদ আলম বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ ভালো আছে বলব। তারপরও বলব, আপনারা (সাংবাদিকেরা) বাইরে গিয়ে দেখে আসেন। প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোস্টার সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আশ্বাস দিয়েছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আমরাও আশাবাদী। কিন্তু ইভিএমের ব্যাপারে আমাদের আস্থাও আছে, শঙ্কাও আছে। শঙ্কা হলো এক জায়গায় ভোট দিলে আরেক জায়গায় চলে যায়।’

জাকের পার্টির প্রার্থী এ কে এম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইভিএমে ভোট হবে, কিন্তু এখনো ভোটারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না। কীভাবে এতে ভোট দেওয়া হবে, সেটা আমাকেও প্রার্থী হিসেবে জানানো হয়নি। এটা নিয়েই আমার শঙ্কা যে সবাই ঠিকঠাক ভোট দিতে পারবে না।’

রাজশাহী নগরের বিভিন্ন এলাকায় টানানো হয়েছে পোস্টার। আজ দুপুরে হযরত শাহ মখদুম দরগা মসজিদের সামনে

জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ ভালো। আমার মনে হয় ভালো থাকবে। ভালো থাকলেই সাধারণ মানুষ ভোট দিতে আসবে। নির্বাচন কেমন হবে, সেটা এখনো বলতে পারছি না। এখনো পর্যন্ত আমার কোনো অভিযোগ নেই। অনেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। আমরা সেটা বলতেও চাই না। আমরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করব না।’

নগরে আগেই পোস্টার লাগানোর বিষয়ে মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয়টি জানি না। আসার পথে দেখিওনি। এখন যেহেতু বরাদ্দ হয়ে গেছে, এখন পোস্টার থাকতে পারে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতীক বরাদ্দ নিতে প্রার্থীরা সমর্থকদের মিছিল নিয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আসেন। প্রতীক পেয়ে আবার তারা স্লোগান দিতে দিতে ফিরে যান। অনেক প্রার্থীর সমর্থকদের এ সময় ভুভুজেলা বাঁশি বাজাতে দেখা যায়। দেখা যায় উৎসবমুখর পরিবেশ।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রার্থীদের আচরণবিধি প্রতিপালনের ১০ জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারাও দেখছেন। সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তাঁরা কাজ করছেন। প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোস্টার লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। বিষয়টা দৃশ্যমান হলে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন, নিয়ম লঙ্ঘন হলে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।’

২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে। এবার মেয়র পদে চারজন ছাড়াও ১০টি সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য ৪৬ জন এবং ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের জন্য ১১২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।