এক আসামির জবানবন্দি

আওয়ামী লীগ নেতার ঘনিষ্ঠরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ করেন

সুমন আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধর করার মামলায় গ্রেপ্তার যুবলীগ নেতা সুমন আহমেদ (৩০) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নাটোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁর জবানবন্দি দেওয়া হয়।

জবানবন্দির তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের পক্ষ নিয়েই সুমনসহ অন্য আসামিরা দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধর করেছেন।

নাটোর সদর থানা সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগ নেতা সুমন আহমেদ ও নাজমুল হককে গতকাল বিকেলে নাটোর সদর আমলি আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) জামাল হোসেন আসামি সুমন আহমেদের জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। আদালত এ ব্যাপারে সুমনের বক্তব্য জানতে চান এবং এ বিষয়ে চিন্তা করার পর্যাপ্ত সময় দেন। দীর্ঘ সময় পর তিনি জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। সন্ধ্যার পরে ওই আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রওশন আলম তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দি শেষে সুমন ও নাজমুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, সুমন জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধর করার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর সঙ্গে আর কারা ছিলেন, তা–ও বলেছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের নাম জানাননি ওসি।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, দেলোয়ার হোসেনের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী¦প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের পক্ষ নিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে সুমন স্বীকার করেছেন।

গত সোমবার বিকেল চারটার কিছুক্ষণ পর নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেতর থেকে দুর্বৃত্তরা দেলোয়ার হোসেনকে মারধর করতে করতে একটি কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। বিকেল পাঁচটার কিছু পরে দুর্বৃত্তরা তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁর গ্রামের বাড়ির (সিংড়ার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রাম) সামনে ফেলে রেখে যায়। ওই ঘটনায় জড়িত অন্তত ১৩ জনের পরিচয় জানা গেছে। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে স্থানীয় সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা তাঁদের শনাক্ত করেছেন। শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ও গাড়িচালকও রয়েছেন। লুৎফুল হাবীব উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

তবে পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশ করেনি।

দেলোয়ার হোসেনকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে স্থানান্তর  
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দেলোয়ার হোসেনের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গতকাল রাতে তাঁকে আইসিইউ থেকে ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। তাঁর সঙ্গে থাকা ভাই এমদাদুল হক আজ বুধবার বেলা ১১টায় মুঠোফোনে বলেন, আজ সকালে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা দেলোয়ারকে দেখেছেন। তাঁকে স্বাভাবিক খাবার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেলোয়ার এখনো আতঙ্কিত। তাঁকে মেরে ফেলা হবে—এমন আশঙ্কার কথা বারবার বলছেন।